নয়া দিল্লি: ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সংসদে জানানো হয়, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ (Article 370) বিলুপ্তি করা হচ্ছে। এর জেরে বিশেষ মর্যাদা (Special Status) হারায় জম্মু-কাশ্মীর (Jammu Kashmir)। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে উঠেছিল একাধিক প্রশ্ন। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলাও হয় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। বর্তমানে এই মামলারই শুনানি চলছে। মঙ্গলবারই শীর্ষ আদালতের তরফে কেন্দ্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীরকে কবে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে? এ দিন জম্মু-কাশ্মীরের বিভাজন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কেন কেবলমাত্র জম্মু-কাশ্মীরকেই ভেঙে দুই টুকরো করা হল, তা জানতে চান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
এ দিন মামলার শুনানির শুরুতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রাজ্য বিভাজনের ক্ষমতা ন্যস্ত করার পর সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করা হবে না, এটা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে? রাজ্য বিভাজনের আলোচনা থেকে এই প্রশ্নও উঠে আসে যে কেন রাজ্য বিভাজনের ইস্যুটি সংসদ মেটাতে পারল না।
৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে চ্য়ালেঞ্জের মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে বলা হয়, “জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়টি অনন্য”। কেন্দ্রের তরফে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “যদি গুজরাট বা মধ্য প্রদেশের বিভাজন করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে বিভাজনের মাপকাঠি ভিন্ন হবে।”
কেন্দ্রের এই ব্যাখ্যার জবাবে বিচারপতি এসকে কৌল জানান, একা জম্মু-কাশ্মীর নয়, আরও অনেক রাজ্য় রয়েছে যাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। পাল্টা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ব্য়াখ্যা দিয়ে বলেন, “প্রতিবেশী দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা জরুরি ছিল।”
সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “পাথর ছোড়া, অবরোধ, সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়.., কিন্তু কেন্দ্রের হাতে সমস্ত রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ বা বিভাজনের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তবে আপনারা কীভাবে নিশ্চিত করবেন যে এই ক্ষমতার অপব্যবহার করা হবে না?”
বিচারপতি কৌল বলেন, “এটা অনন্য কোনও পরিস্থিতি নয়। আমরা পঞ্জাবেও দেখেছি সীমান্ত নিয়ে কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। একই ঘটনা উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যেও হয়েছে…আগামিকাল যদি এই প্রত্য়েকটি রাজ্যে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে কী হবে?”
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও প্রশ্ন করেন, “সংসদের কি ক্ষমতা রয়েছে কোনও রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করার? ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে যদি গণপরিষদের ভূমিকা কেবল পরামর্শদাতাই হয়, তবুও এই পরিবর্তন করার অধিকার রাষ্ট্রপতির নেই।”
প্রসঙ্গত, এর আগের একটি শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়েছিল, কেন সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করা হল, তা নিয়ে সরকারকে বিস্তারিত ব্য়াখ্যা দিতে হবে।