নয়া দিল্লি: বাতাসে ক্রমশ বেড়েই চলেছে বিষের মাত্রা । দীপাবলির ১০ দিন পরও দিল্লিতে দূষণের মাত্রা কমার কোনও লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দিল্লি-এনসিআর (Delhi-NCR) এলাকার সমস্ত স্কুল(School), কলেজ (College) ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (Educational Institute) বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হল। আপাতত অনলাইন মাধ্যমেই ফের পড়াশোনা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতেই কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের (Commission For Air Quality Management) তরফে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়। দিল্লি ছাড়াও হরিয়ানা (Haryana), রাজস্থান (Rajasthan) ও উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh) সরকারকেও এই নির্দেশগুলি মানতে হবে বলে জানানো হয়েছে। গতকালই দিল্লি-এনসিআৎ অঞ্চলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি বৈঠকে বসা হয়েছিল। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে উল্লেখিত প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকে আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
৫০ শতাংশ ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ : স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি বায়ুর গুণমান নিয়ন্ত্রক কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২১ নভেম্বর অবধি দিল্লির সমস্ত সরকারি অফিসের অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা দিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশিকা অনুসরণের অনুরোধ করা হয়েছে।
ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: অত্যাবশ্য়কীয় পণ্য ছাড়া বাকি কোনও ট্রাককে আগামী ২১ নভেম্বর অবধি দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
বন্ধ নির্মাণ কাজও: দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে আগামী ২১ নভেম্বর অবধি সমস্ত ধরনের নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে, রেল পরিষেবা বা স্টেশন তৈরির কাজ, মেট্রো রেল কর্পোরেশনের কাজ, বিমানবন্দর ও আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাস তৈরি এবং জাতীয় সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোনও প্রকল্পের কাজে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
দূষণ রুখতে গাড়ির কড়া চেকিং: দূষণ রোধে দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরেই মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিকে দৃশ্যমান দূষণকারী গাড়ি ও পিইউসি (Pollution Under Control) সার্টিফিকেট ছাড়া গাড়িগুলিকে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ট্রাফিক বিভাগকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে যথাসম্ভব কম যানজট হয় এবং গাড়ির যাতায়াত সুগম হয়। এরফলে দূষণের মাত্রা আরও কিছুটা কমানো যাবে, কারণ ট্রাফিক সিগনালেও একাধিক গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকায় দূষণ ছড়ায়।
বন্ধ ৬টি থার্মাল প্ল্যান্ট: দিল্লির সীমানার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ১১টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬টি প্ল্যান্ট আপাতত দূষণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলি আগামী ৩০ নভেম্বর অবধি বন্ধ থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
দীপাবলির সময়ে বাজি পোড়ানো, শিল্পাঞ্চল ও গাড়ি থেকে দূষণ এবং পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর জেরে যে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরে বিগত ১০ দিন ধরেই বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চল। সোমবারও দিল্লিতে বাতাসের গুণমান বিপজ্জনক পর্যায়েই ছিল। আগামী তিনদিনও দূষিত বাতাসে কোনও প্রকার উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই জানানো হয়েছে।