
শিলচর: এ এক সাধারণ ঘরের দশভূজার কাহিনি। মাতৃশক্তির জাদু-ক্ষমতার কাহিনি। কোলে সাত মাসের শিশুকে নিয়েই রোজ কর্তব্য পালন করছেন অসমের একজন মহিলা পুলিশ কনস্টেবল। আর সেই কাহিনি এখন কাছাড় জেলার সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। সকলে ‘ধন্য ধন্য’ করলেও, একরকম বাধ্য হয়েই তাঁকে শিশুকোলে কর্মস্থলে আসতে হচ্ছে।
ওই মহিলা কনস্টেবলের নাম সচিতা রানি রায়, বয়স ২৭। তাঁকে শিলচর পিআই কোর্টে মোতায়েন করা হয়েছে। শিলচরের মালুগ্রাম এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন তিনি। মাতৃত্বকালীন ছুটি যা ছিল, সম্প্রতি তার সবই ফুরিয়ে গিয়েছে। তিনি আরও ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, মঞ্জুর হয়নি। ফলে কাজে যোগ দিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। প্রতিদিন সকালে তিনি তাঁর মালুগ্রামের ফ্ল্যাট থেকে, সাত মাসের শিশুকে একটি ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বুকে বেঁধে নিয়ে বের হন। ঘড়ি বেঁধে সকাল সাড়ে দশটায় কার্যালয়ে ঢোকেন। পুলিশের কাজ, ফলে কখন শেষ হয় তার ঠিক নেই। দিনের কাজ শেষ করে আবার শিশুকে নিয়ে আবার মালুগ্রামের বাড়িতে ফিরে যান।
কিন্তু, তাঁর বাড়িতে কি কেউ নেই? সচিতা রানি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের জওয়ান। অসমের বাইরে এক জায়গায় তাঁকে মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে শিলচরে সচিতার বাপের বাড়ির কেউ বা শ্বশুর বাড়ির তরফে কোনও আত্মীয়ও থাকেন না। ফলে, বাড়িতে কেউ যে তাঁর বাচ্চার যত্ন নেবে, এমন কেউ নেই। শিশুটিকে সঙ্গে করে অফিসে আসতে একপ্রকার বাধ্য তিনি। নাহলে, কাজটা খোয়াতে হতো। সচিতা রানী রায় বলেছেন, ‘বাড়িতে আমার বাচ্চার যত্ন নেওয়ার জন্য কেউ নেই তাই আমি ওকে আমার সঙ্গে আনতে বাধ্য হচ্ছি। মাঝে মাঝে বিষয়টা অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু, আমার কাছে অন্য কোন বিকল্প নেই’।
তাঁর ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর না হলেও, তাঁর সহকর্মীদের এবং পুলিশ বিভাগের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছেন সচিতা। কারণ, তাঁর সকল সহকর্মীরা এবং উচ্চ পদস্থ কর্তারাও অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তাঁরা না থাকলে, তাঁর পক্ষে বাচ্চা নিয়ে অফিস করা সম্ভব হত না। এমনকি, তাঁকে নির্ধারিত সময়ের একটু আগে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। সচিতা বলেছেন, ‘আমি একটু তাড়াতাড়ি চলে যাই। বাচ্চাটার পক্ষে সারাদিন একা একা থাকাটা খুব কঠিন। আমি তো সেভাবে সময় দিতে পারি না’। সচিতা আরও জানিয়েছেন, ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত, এভাবেই একইসঙ্গে পুলিশ এবং মা হিসাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাবেন তিনি।