বোলপুর: ছাত্রাবস্থায় তিনি মনমোহন সিং-কে যেমন চিনতেন, তাতে তাঁরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে কম ছিল। কারণ, তাঁর রাজনীতি নিয়ে কোনও আগ্রহ ছিল বলে মনে হত না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন নোবেলবজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি রাহুল গান্ধীকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখছেন? এরই জবাবে মনমোহন সিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, “এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন। দিল্লিতে আমার ছাত্রাবস্থায় কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করত, কার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাহলে আমি হয়তো মনমোহন সিং-এর নাম বলতাম। কারণ তাঁর তখন রাজনীতিতে কোনও আগ্রহ ছিল না। তিনি পরে এক প্রধানমন্ত্রী হন। আর আমার মতে একজন চমৎকার প্রধানমন্ত্রী। তাই এই বিষয়গুলি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।”
তবে, রাহুল গান্ধী আগের থেকে অনেক পরিণত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অমর্ত্য সেন। তবে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের আমলে সংসদে রাহুল গান্ধী কীভাবে বিরোধীদের নেতৃত্ব দেন, সেখানেই তাঁর আসল পরীক্ষা বলে মনে করছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’রও প্রশংসা করেছেন তিনি। অমর্ত্য সেনের মতে, এই যাত্রা শুধু রাহুলকে একজন জাতীয় নেতা হিসাবে গড়ে তোলেনি, পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকেও সমৃদ্ধ করেছে। অমর্ত্য সেন জানিয়েছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে যখন পড়তেন রাহুল, সেই সময় থেকেই তাঁকে চেনেন তিনি। রাহুলের পরিণত হওয়ার যাত্রার কথা বলতে গিয়ে সেই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, “যখন তিনি ট্রিনিটি কলেজে পড়তেন, আমি সেই সময় থেকে তাঁকে চিনি। আমিও ওখানেই পড়াশোনা করেছি এবং পরে সেখানকার শিক্ষকও হয়েছি। সেই সময়, তিনি জীবনে কী করতে চান, সেই সম্পর্কে অনিশ্চিত ছিলেন। তখন তাঁর রাজনীতি পছন্দ ছিল না। প্রথম দিকে, রাজনীতিতে পায়ের তলায় জমি পেতে তাঁর বেশ কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু, তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অসাধারণ। আমি এর প্রশংসা করব। আপনি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে নির্বাচনে জিততে পারবেন না, এটি দেশের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে।” অমর্ত্য জানিয়েছেন, ট্রিনিটিতে পড়ার সময় রাহুল অ্যাকাডেমিক আলোচনায় অত্যন্ত বাকপটু ছিলেন কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে তেমন স্পষ্টবাদী ছিলেন না। তবে, এখন রাহুল গান্ধী রাজনীতিতে অনেক বেশি স্পষ্টভাবে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে পারছেন।
ভারতে সামাজিক অসাম্য এবং সাম্প্রদায়িকতার সমস্যার মোকাবিলায় রাহুল গান্ধীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, “সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, যেখানে অসাম্য এবং সাম্প্রদায়িকতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে, সেখানে তিনি কীভাবে বিরোধী দলকে নেতৃত্ব দেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাঁর প্রাথমিক ভূমিকা, এবং আমি মনে করি তিনি ভালভাবেই সেই ভূমিকা পালন করছেন।”