অযোধ্যা: অযোধ্যার প্রতিটা রাজনৈতিক-সামাজিক উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে সরযূ নদী। কেটেছে একটার পর একটা দিন। শত স্রোত বয়ে গিয়েছে নদীর বুক ধরে। প্রকৃতি বছর বছর ধরে লেপের মতো বিছিয়েছে বালির চর। নদীর পাড়েই এক সময় ধূসর হয়ে থেকেছে ভেঙে পড়া বাবরির ধ্বংসাবশেষ।
তবে সে সব এখন অতীত। দীপাবলিতে এই সরযূ নদীতেই জ্বলেছে ২৫ লক্ষ প্রদীপ। গড়েছে বিশ্ব রেকর্ড। রামমন্দিরের আলোয় এখন অনেকটাই প্রদীপ্ত এই সরযূ নদী। ধূসরতা একেবারেই ঢেকেছে আলো। শীর্ষ আদালতের একটা রায় বদলে গিয়েছে ইতিহাস-বর্তমান ও তার রাজনীতি।
অযোধ্যায় এখন প্রতি সন্ধ্যায় সেজে ওঠে রামমন্দির। জ্বলে ওঠে হাজারটা প্রদীপ। তবে পরিস্থিতি আগে এতটা মোটেই ঠান্ডা ছিল না। ৯ নভেম্বর, ২০১৯ সাল। অযোধ্যা মামলায় রায় দেয় শীর্ষ আদালত। তারপর কয়েক বছরেই রূপ বদলে যায় অযোধ্যার। কেন্দ্র সরকারের তৈরি রামমন্দির ট্রাস্টকে অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি মন্দির বানানোর অনুমতি দেয় পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। অযোধ্যার মূল বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি রামলালাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি, আর ৬৭ একর জমিও পেয়েছিল হিন্দু পক্ষই। অন্যদিকে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম পক্ষকে অযোধ্যাতেই দেওয়া হয় ৫ একর জমি।
এই মামলায় রায় দেওয়া সাংবিধানিক বেঞ্চে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এছাড়াও ছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। আরও এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে। ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজির।
প্রসঙ্গত, অযোধ্যার রায়ে রাজনীতি যখন তুঙ্গে। ঠিক সেই সময়েই রাজ্যসভায় সদস্য রূপে নির্বাচিত হন এই মামলার অন্যতম মুখ তথা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাজ্যসভার সাংসদ রূপে তাঁর নাম মনোনীত করেন। অবশ্য, প্রাক্তন বিচারপতির রাজ্যসভায় যোগদানের নেপথ্যে পদ্ম শিবিরের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে থাকে বিরোধী শিবির।
রায়দানের পর থেকে জোরকদমে মন্দির নির্মাণে ময়দানে নেমে পড়েছিল রামমন্দির ট্রাস্টি। ইতিহাসের খাতায় নাম তুলে চলতি বছরের শুরুতেই ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হয় রামমন্দির। নির্মাণ কাজ তখনও যে পুরোপুরি শেষ হয়েছিল এমনটা নয়। ভোটের আগেই রামমন্দিরকে তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করতে উদ্বোধনের ঘোষণা করেছিল পদ্ম শিবির, মত ওয়াকিবহাল মহলের।
কিন্তু বিতর্ক যেন তাতেও পিছু ছাড়ে না। রামমন্দির নির্মাণে আগে পরে, এমনকী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে চলে বিতর্ক। তীব্র হয় বিজেপির সঙ্গে শঙ্করাচার্যদের সংঘাত। পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী অভিযোগ করেন রামমন্দির ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর আচরণ ‘উন্মাদের লক্ষণ’। সনাতন ধর্মীয় রীতি মেনে রামমন্দিরে রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হচ্ছে না বলেই দাবি করেছিলেন তিনি।