নয়া দিল্লি: বিয়ে প্রত্যেক মানুষের জীবনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের মুহূর্ত। স্বাভাবিকভাবে প্রত্য়েকেই তাদের সাধ্যমতো পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে এই আনন্দের মুহূর্তটি ভাগ করে নেয়। প্রীতিভোজ-সহ উদযাপন করে থাকে। তবে সব বিবাহিত সম্পর্কই তো আর মধুর হয় না, বেশ কিছু বিয়ে ভেঙেও যায়। এরকম কোনও বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মুক্তি পেলে, তাও সমানভাবে উদযাপন করা উচিত, এমনটাই মনে করে মধ্য প্রদেশের ভোপালের পুরুষদের একটি সংগঠন। আর এই ভাবনা থেকেই তারা আয়োজন করেছিল একটি বিবাহ বিচ্ছেদ পার্টির। কিন্তু, সেই পার্টির আমন্ত্রণপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক। যার জেরে শেষ পর্যন্ত এই অভিনব পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।
পুরুষদের ওই এনজিওটির নাম ‘ভাই ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে এই সংগঠন পুরুষদের সাহায্য করে থাকে। পুরুষদের জন্য তারা একটি হেল্পলাইন চালু করেছে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পুরুষ সমস্যার সম্মুখীন হন, তাদের পাশে দাঁড়ায় ‘ভাই ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। এনজিওটির দাবি, বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে প্রায়শই পুরুষরা অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান। তাই, বিষাক্ত বিবাহিত জীবন থেকে তাঁরা যখন ‘মুক্তি’ পান, তখন তা উদযাপন করা উচিত। সেই ক্ষেত্রে ওই পুরুষরা অনুভব করবেন যে বিবাহ বিচ্ছেদেই জীবন শেষ হয়ে যায় না।
এই ভাবনা থেকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ‘বিবাহ বিচ্ছেদ সমারোহ’ নামে এক পার্টির আয়োজন করেছিল তারা। ওই দিন সকাল ১১টা থেকে ভোপালের উপকণ্ঠে বিলখিরিয়ায় এক রিসর্টে ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছেদের জন্য কঠিন আইনি লড়াই করা ১৮ জন পুরুষের বিবাহবিচ্ছেদ উদযাপন করার কথা ছিল। অংশ নিতেন সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য।
বিবাহ বিচ্ছেদ উদযাপন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রটি সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে। আমন্ত্রণপত্র অনুযায়ী, শুধু খাওয়া দাওয়া নয়, বিবাহের ক্ষেত্রে যেমন কিছু ধর্মীয় আচার মানা হয়, তেমনই এই বিচ্ছেদ উদযাপনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু আচার তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ‘বিবাহের মালা বিসর্জন’, বিবাহে মহিলাদের সঙ্গীত অনুষ্ঠানের অনুকরণে ‘পুরুষদের সঙ্গীত’, ‘সদ্বুদ্ধি শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ’ এবং মানুষের মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সাতটি পদক্ষেপ এবং শপথ গ্রহণ।
তবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠানটিই বাতিল করা হয়েছে। আসলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অনুষ্ঠানের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ধর্মীয় সংগঠনও এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরপরই পিছিয়ে আসে এনজিওটি। ভাই ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ছিল একেবারেই “ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান”। একে কেন্দ্র করে কোনও রাজনীতি হোক, সেটা তারা চায় না। আর সেই কারণেই বিতর্ক এড়াতে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, সংগঠনটি মোটেই নারী বিদ্বেষী নয়, যেমনটা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে। সংগঠনের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য শুধু আইনের অপব্যবহার রোধ করা।