দ্বারভাঙা: দুর্ঘটনার জেরে দুটি হাতই বাদ দিতে হয়েছে। কিন্তু তাতে কী! প্রেম-ভালবাসা তো কেবল শরীর বা সৌন্দর্য দেখে হয় না। সেখানে দুটি মানুষের মন কথা বলে। তাই ধর্ম, ভাষা, দেশের সীমান্ত প্রেমের পথে বাধা হতে পারে না, তেমনই বয়স, সামাজিক বাধা বা শারীরিক সমস্যাও কোনও বাধা নয়। তারই নজির গড়লেন বিহারের দ্বারভাঙা জেলার বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল ও তাঁর প্রেমিকা।
দ্বারভাঙা জেলার ঘনশ্যামপুরের দেউরি গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ। দাদার শ্যালিকার সঙ্গে প্রদীপের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। প্রায় ৮ বছর ধরে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু, যুবতীর পরিবার এই বিয়েতে রাজি ছিল না। কারণ, প্রদীপের দুটি হাত নেই। যদিও যাঁর সঙ্গে প্রদীপের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সেই তরুণী প্রদীপকে ছাড়েননি। প্রদীপ বিশেষভাবে সক্ষম তকমা পাওয়ার পরও তাঁকে বিয়ে করতে সম্মত হন তিনি। বাড়ির লোকেদের মত না থাকলেও তাঁরা কালী মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন।
তবে বিয়ের মুহূর্তটি ছিল অসাধারণ। যেখানে প্রদীপের দুটো হাতই নেই, সেখানে কীভাবে মালাবদল, সিঁদুর পরানো থেকে বিয়ের সব নিয়ম মানা হবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু, ভালবাসার টান ও বুদ্ধির জোরে সকলের সব সংশয় কাটিয়ে দিলেন প্রদীপ। পায়ে করেই বরমাল্য প্রেমিকার গলায় পরিয়ে দিলেন তিনি। তারপর কয়েনে সিঁদুর ভরে সেটি পায়ের আঙুলের ফাঁকে নিয়ে মেয়েটির সিঁথি ভরিয়ে দিলেন প্রদীপ। তাঁদের বিয়ের এই দৃশ্যে অভিভূত সেখানে উপস্থিত পুরোহিত থেকে সকলে।
পায়ে করে কেবল বিয়ে করা নয়, সমস্ত কাজই করেন প্রদীপ। স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়া থেকে পা দিয়ে কম্পিউটারও চালাতে শিখেছেন তিনি। তাঁর পরিবার জানান, আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক ছিলেন প্রদীপ। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ২০০৮ সালে তাঁদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসার পর একদিন বাড়ির বাইরে খেলছিলেন প্রদীপ। সেই সময় ৩৩ হাজার ভোল্টে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে তাঁর হাতের উপর পড়ে এবং দুটি হাতই ঝলসে যায়। তারপর অনেক চিকিৎসা করেও সুরাহা হয়নি। দুটি হাতই বাদ দিতে হয়। তবে হাত বাদ গেলেও প্রদীপ যে কোনও অংশে কম যান না, তা তাঁর স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়া থেকে অভিনবভাবে বিয়ে করার ঘটনাতেই স্পষ্ট।