
পটনা: ‘পাপা, ম্যায় অভি জিন্দা হুঁ’ (বাবা আমি এখনও বেঁচে আছি)। ফোনের ওদিক থেকে এই একটি বাক্য শুনেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন শোকাহত বাবা। এতবড় মিরাকল কি সত্যিই ঘটল তাঁর জীবনে? বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ফোনের ওদিকের কন্ঠ যে তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেয়ের। মাত্র কয়েকদিন আগেই যাঁর দেহ, দাহ করা হয়েছে। কিন্তু, ভিডিয়ো কলের ওদিকের মুখটাও তো তাঁর মেয়েরই! বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের পূর্ণিয়া জেলায়। নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পর যাঁকে দাহ করা হয়েছিল, সেই মেয়েকেই পাওয়া গেল জীবিত অবস্থায়। তাহলে দাহ করা হল কার দেহ? সেই বিষয়ে তদন্ত করে উঠে এসেছে আরও এক কাহিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক মাস আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন অংশু কুমারী নামে ওই যুবতী। তিনি, পূর্ণিয়ার আকবরপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর খোঁজে, তাঁর বাবা বিনোদ মন্ডল এবং পরিবারের অন্যান্যরা ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেছিল। কিন্তু, তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশও তাঁর কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। গত সপ্তাহে, স্থানীয় এক খাল থেকে এক যুবতীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। অংশুর পরিবার, দেহটি দেখে সেটি অংশুর বলে শনাক্ত করেছিল। তবে, দেহটি এমনভাবে পচে-গলে গিয়েছিল যে, তার মুখ চেনার উপায় ছিল না। তারপরও, দেহটির পরণে যে পোশাক ছিল, তার ভিত্তিতে দেহটি অংশুর বলে জানিয়েছিল অংশুর পরিবার।
মেয়ের শোকে বিনোদ মণ্ডল এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, শ্মশানে যেত পর্যন্ত পারেননি। পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম পালন করেছিলেন অংশু কুমারের ঠাকুর্দা। স্থানীয় এলাকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল অংশুর মৃত্যুর খবর। এরপর, গত শনিবার (১৯ অগস্ট), হঠাৎ একটি ভিডিয়ো কল আসে বিনোদের ফোনে। উল্টোদিকে ছিল অংশু। তিনি তাঁর বাবাকে জানান, তাঁর মৃত্যু হয়নি। কাউকে কিছু না বলে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছিলেন তিনি। বিয়েও করেছেন। বর্তমানে পূর্ণিয়া জেলারই জানকীনগর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আছেন তিনি। অংশুকে ভিডিয়ো কল করে বিষয়টি যাচাই করেছে পুলিশও।
তাহলে অংশু বলে ভুল করে, কার দেব দাহ করল তার পরিবার? আকবরপুর থানার স্টেশন হাউস অফিসার সুরজ প্রসাদ জানিয়েছেন, ওই মহিলাকেও শনাক্ত করা গিয়েছে। তিনি, ‘ডিসঅনার কিলিং’ বা পারিবারিক সম্মান রক্ষার দোহাই দিয়ে হত্যার শিকার। তার পরিবারের সদস্যরাই তাঁকে হত্যা করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, দেহটি ওই মহিলার বলে বোঝার পরই, তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু, তাঁর বাবা-মা পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ চালাচ্ছে।