In Depth: লোকসভা ভোটে ১৪৭ কোটি খরচ তৃণমূলের! বামেদের কত জানেন?
In Depth: নির্বাচনের পর পরই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ভারতের নির্বাচনকে বিশ্বের সবচেয়ে 'ব্যয়বহুল' ভোটের তকমা দেয় ‘সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ়’। তাদের দাবি, দেশের মোটামুটি প্রতিটি দল মিলিয়ে ২৪-এর নির্বাচনে খরচ হয়েছে ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা।

কলকাতা: বহু দিন হল মিটেছে লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয়বার নিজেদের সরকার গড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। গত দু’বারের তুলনায় এবার পার্থক্য একটাই, তা হল জোট। এর আগের বছরগুলো নিজের দমে সরকার গঠন করেছিল পদ্ম শিবির। কিন্তু এই বছর সমীকরণটা যেন ঘেঁটে যায় বড্ড। হয় না লক্ষ্যপূরণ। অধরাই থেকে যায় মোদীর ‘আব কি বার ৪০০ পার’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দেশজুড়ে বাড়ন্ত বেকারত্ব, আন্দোলন ও সবশেষে মোদীর অতিরিক্ত ‘আত্মবিশ্বাস’ই ভরাডুবির অন্যতম কারণ হয়ে যায়।
কিন্তু সে সব এখন অতীত। তীরে গিয়ে তরি ডোবেনি বিজেপির। বাঁচিয়ে দিয়েছে নীতীশ-নায়ডু। আর তাদের হাত ধরেই দিল্লিবাড়ির কর্তা হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এই কর্তা হওয়ার খরচটা কি জানেন? নির্বাচনের পর পরই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ভারতের নির্বাচনকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘ব্যয়বহুল’ ভোটের তকমা দেয় ‘সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ়’। তাদের দাবি, দেশের মোটামুটি প্রতিটি দল মিলিয়ে ২৪-এর নির্বাচনে খরচ হয়েছে ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, দেশের প্রতিটি ভোট পেতে খরচ হয়েছে ১৪০০ টাকা। সেই সংস্থার আরও দাবি, মার্কিন নির্বাচনের খরচকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত। ২০২০ সালে আমেরিকার নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ১.২০ লক্ষ কোটি টাকা।
সম্প্রতি কিন্তু ভারতের এই রেকর্ডকে ফের ভেঙে দিয়েছে আমেরিকা। প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনই ফের এই বিশ্বের সবচেয়ে ‘ব্যয়বহুল’ নির্বাচন। সেদেশের দলগুলির মিলিত খরচ মিলিয়ে গত বছর ভোটে খরচ হয়েছে ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। বলা যেতে পারে, নির্বাচনে কে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে পারবে, এই নিয়ে যেন রেষারেষি চালাচ্ছে ভারত-আমেরিকার রাজনৈতিক দলগুলি।
১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা গোটাটাই দেশের সব দলগুলির মিলিত খরচ। রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালে দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল মোট ৭৪৪টি দল। তাদের মিলিত খরচেই দাঁড়িয়েছে এই অঙ্ক। কিন্তু এমনটা নয় যে সব ক’টি দলের খরচ সমান। কারোর অনেকটা বেশি, কারোর অনেকটা কম।
নির্বাচনী বন্ডে বিতর্ক
ভোটের বেশ কয়েক মাস আগে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। কোথা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ভোটের খরচের জন্য পাচ্ছে দলগুলি? শীর্ষ আদালতে প্রশ্ন উঠতেই বাতিল করে দেওয়া নির্বাচনী বন্ড। একেবারের মতো তালা পড়ে যায় দলগুলির আয়ে। এত দিন বন্ড মাধ্যমে কত টাকা আয় করেছে দলগুলি সেই খতিয়ান SBIকে প্রকাশ্যে আনা নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। ভোটের আগেই খোলাসা হয় দেশের একাধিক বড় বড় দলের ‘গোপন’ আয়ের।
আশা মতোই সেই তালিকায় সবচেয়ে ধনী দলের খেতাব পায় বিজেপি। নির্বাচনী বন্ডের হাত ধরেই তাদের আয় হয়েছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। সাধারণভাবেই এই তালিকায় বিজেপির পর জাতীয় কংগ্রেসের কথাই ভেবেছিল জনতা। কিন্তু, তা হয়নি। ‘গোপন’ আয়ের নিরিখে কংগ্রেসকেও টপকে গিয়েছে তৃণমূল। আঞ্চলিক দলের আয় দেখে মাথায় হাত পড়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। নির্বাচনী বন্ড দিয়ে ভোটে লড়ার জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পেয়েছিল তারা। কংগ্রেসের ব্য়াঙ্কে এসেছিল ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। আর যা ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।
‘কর্তা’ হতে কত খরচ?
তৃতীয়বার নিজেদের সরকার গঠন করেছে বিজেপি। আর বরাবরের মতোই সেই সরকারের মাথায় বসেছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রত্যাশা মতো ফের একবার দিল্লিবাড়ির কর্তা হয়েছেন তিনি। কিন্তু এই কর্তা হতে বিজেপির কত খরচ হয়েছে? সম্প্রতি দেশের প্রতিটি দল, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের ভোটের খরচের খতিয়ান প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোট ১৭৩৭ কোটি টাকা খরচ করেছে পদ্ম শিবির। এর মধ্যে ১৪৯২ কোটি টাকা নির্বাচন লড়তে ও ২৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বিজেপির ভোটের খরচ। এর আগের নির্বাচনে মোট খরচ হয়েছিল ১২৬৪ কোটি টাকা।
বিজেপির মোট খরচের ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬১১ কোটি টাকা গিয়েছে শুধুমাত্র খবরের কাগজ ও সংবাদমাধ্য়মে দেওয়া বিজ্ঞাপনে। ১৮০ কোটি টাকা খরচ ফেসবুক ও গুগলের বিজ্ঞাপনে। ১৬৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বিজেপির তারকা প্রচারকদের সফরে। ৫৫ কোটি টাকা গিয়েছে হোর্ডিং, ব্যানারের মতো কাজে। ১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে মিটিং-মিছিল করতে। বাকি ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নমো স্টল ও সমীক্ষা চালাতে।
কংগ্রেসের নির্বাচনী খরচ
জাতীয় দল হিসাবে বিজেপির পর কংগ্রেসের নাম। কিন্তু খরচের দিক থেকেও পদ্ম শিবিরের কাছে একাধিক গোল খেয়ে বসে কংগ্রেস। তাদের লোকসভা নির্বাচন ছাড়াও আরও চারটি রাজ্য, যথাক্রমে অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা ও সিকিম মিলিয়ে খরচ ৫৮৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪০৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বিজ্ঞাপন কাজে। ১০৪ কোটি টাকা তারা খরচ করেছে শুধুমাত্র তারকা রাজনীতিকদের প্রচারকাজে ও ৬৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে পোস্টার-ব্যানারে। বাকি ১৩ লক্ষ খরচ হয়েছে মিটিং মিছিলে।
তৃণমূলের নির্বাচনী খরচ
বলে রাখা ভাল, গোটা দেশের প্রতিটি রাজ্যে বিজেপির উপস্থিতি রয়েছে। একই ভাবে প্রদীপের শেষ আলোর মতো টিকে রয়েছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ খরচ কিছুটা হলেও যুক্তিযুক্ত। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলায় নির্বাচন লড়ে কীভাবেই বা এই দুই দলকে টেক্কা দেওয়া খরচ করতে পারে তৃণমূল?
নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, লোকসভা ভোটে মমতার শিবিরের খরচ হয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে তারকা প্রার্থীদের প্রচারে। ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে প্রার্থীদের জন্য। ১১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে ব্যানার, পোস্টার কাজে ও ৬ কোটি ৭১ লক্ষ খরচ হয়েছে সংবাদমাধ্য়মে বিজ্ঞাপন দিতে। বাড়তি ৪৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে দলের নির্বাচনী প্রচারে।
দক্ষিণী দলগুলির খরচ
তৃণমূলকে খরচের নিরিখে টেক্কা দিচ্ছে দক্ষিণী দল AIADMK। হিসাব বলছে, লোকসভা ও তামিলনাড়ুর কয়েকটি উপনির্বাচন ঘিরেই তারা খরচ করেছে ২৬৫ কোটি টাকা। ভোটের খরচের তালিকায় নজর কাড়ছে DMKএও। শুধুমাত্র লোকসভা নির্বাচনেই তামিলনাড়ুতে তাদের খরচ হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। ২০১৯এর নির্বাচনে তারা খরচ করেছিল ৭৯ কোটি টাকা।
নীতীশের টক্কর
নির্বাচন কমিশনের হিসাব বলছে, বিহারে লোকসভা নির্বাচন ও একটি উপনির্বাচন লড়তে গত বছর মোট ১৪৭ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে জনতা দল (ইউনাইটেড)। অপরদিকে, তাদের বিরোধী দল অর্থাৎ লালুর দল সেই নিরিখে খরচ করেছে মাত্র ৮ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা।
বামেদের কত খরচ?
বাংলার ভোটে তারা শূন্য। লোকসভা ভোটে ৫৪৩এ পেয়েছে মাত্র ৪। রাজ্য বলতে, হাতে রয়েছে সেই কেরল। ২০২০-২১ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, সে বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকা সম্পত্তি বেড়েছিল বামেদের। ৬৫৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৭৩৫ কোটি টাকা। এই নিরিখে বলা যেতে পারে, ভোটের ব্যালটে অস্তিত্ব সংকটে থাকলেও, দেশের ধনী রাজনৈতিক দলগুলির তালিকায় তারা অনেকটাই উপরে।
সেই ‘ধনী’ বামেদের লোকসভার খরচ কত জানেন? নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া তাদের খতিয়ান অনুযায়ী, গত নির্বাচনে মাত্র ৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল তারা।





