
নয়া দিল্লি: বুধবারই মণিপুর থেকে ভাইরাল হয়েছে দুই মহিলার সঙ্গে নক্কারজনক আচরণের এক বিভীষিকাময় ভিডিয়ো। লজ্য় মুখ ঢেকে গিয়েছে গোটা দেশের। এই অবস্থায় মণিপুরে গত দুই মাস ধরে চলতে ধাকা বেনজির হিংসার বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। সংসদে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছে তারা। এই নিয়ে হই-হট্টগোলের মধ্যে, বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন প্রায় বিনা কার্যক্রমেই মুলতবি করে দিতে হয়েছে সংসদের দুই কক্ষ। বিকেলেই সাংবাদিক সম্মেলন করে, বিরোধী দলগুলিকে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটল বিজেপি। সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করেছেন, মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত সরকার। কিন্তু, কংগ্রেসই এই নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে। আসলে, মণিপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় তারা। তাদের একমাত্র লক্ষ্য সংসদের কার্যক্রম ব্যাঘাত ঘটানো। বিজেপি নেতা বলেছেন, “আমরা চাই কক্ষে এই নিয়ে বিতর্ক চলুক। কিন্তু, কংগ্রেস তা চায় না। দেশবাসীর এটা জানা উচিত।
প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সকালেই এই ঘটনা নিয়ে কঠোর বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। কংগ্রেসকে ঠিক করতে হবে, তারা সংসদে আলোচনা চায় নাকি এই নিয়ে রাজনীতি করতে চায়। বরাবর কোনও একটি বিষয় নিয়ে হইচই শুরু করে তারপর সেই বিষয়ে বিতর্ক থেকে পালিয়ে যায় কংগ্রেস। রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “তারা প্রত্যেকবার সংসদের কক্ষে একটি করে বিষয় তোলে। এর আগে রাহুল গান্ধী পেগাসাসের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। কিন্তু, পরে তদন্ত কমিটির কাছে রাহুল গান্ধী তাঁর ফোন দিতে চাননি। প্রত্যেকবার সংসদ অচল করার জন্য তারা একটি করে বিষয় বেছে নেয়। চায় সেটা নিয়েই পুরো অধিবেশনে আলোচনা হোক। কিন্তু, তা নিয়ে যখন বিতর্ক হয়, তখন তারা আর থাকে না। আদানি ইস্যুতেও তাই করেছে কংগ্রেস। সবাই জানে রাফাল ইস্যুতে কী হয়েছিল, জনসাধারণ তার জবাবও দিয়েছে।”
মণিপুর নিয়ে বিরোধীরা সরব, কিন্তু রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের হিংসার ঘটনা নিয়ে কেন তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন, সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। প্রবীণ বিজেপি নেতা বলেছেন, “মণিপুরের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তীব্র নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীরা মহিলাদের সম্মান নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হলে, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের ঘটনা নিয়ে তারা নীরব কেন? সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী বা খাড়্গে সাহেব, কেউ কিছু বলেননি। আমরা এই বিষয়ে সংসদে আলোচনা চেয়েছি, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আমরা সব রাজ্যে মহিলাদের সম্মান চাই। লোকসভায় প্রহ্লাদ যোশী এবং রাজ্যসভায় পীযূষ গোয়েল আলোচনার কথা বলছিলেন। কিন্তু, কোন বিভাগে আলোচনা হওয়া উচিত, সেটাই ঠিক করতে পারছে না কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধীরা। এই নিয়ে আলোচনা হলে মণিপুরের ভাল হতো।”
তিনি আরও দাবি করেছেন, মোদী সরকারের আমলে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বাকি ভারতের সহ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ অনেক বেড়েছে। রবিশঙ্কর প্রসাদ জানন, প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা অন্তত ৪০০ বার সফর করেছেন মণিপুরে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মনমোহন সিং তো উত্তর-পূর্বেরই সাংসদ ছিলেন। তিনি কী করেছিলেন?”
এদিকে, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সংসদ অচলের দায় চাপিয়েছেন মোদী সরকারের উপরই। তিনি টুইট করেছেন, “বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন, সংসদের উভয় কক্ষই হইহট্টগোলে ডুবে গেল। মোদী সরকার সংসদে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে অবিলম্বে আলোচনা করতে এবং এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রকাশে রাজি না হওয়ায় এই পরিস্থিতি হল। উভয় কক্ষের বৈঠকের আগে, সংসদের বাইরে থেকে সংবাদমাধ্যম মারফৎ দেশের উদ্দেশে বার্তা দেওয়াই বেশি সঙ্গত মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, কীভাবে এবং কেন ডাবল ইঞ্জিনের সরকার এত বড় মানবিক ট্র্যাজেডি ঘটতে দিল, সেই বার্তাতেও তা বলা নেই। এই ট্র্যাজেডি মণিপুরের সামাজিক কাঠামোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।”