ভারতীয় প্রতিরক্ষার মুকুটে নয়া পালক। তৈরি হচ্ছে নেক্সট জেনারেশনের ব্রহ্মস মিসাইল। ছুটবে শব্দের চেয়েও ৩.৫ গুণ জোরে। আঘাত করবে ২৯০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে। নাম — ব্রহ্মস এনজি (BrahMos NG)।
আরও হালকা ও ক্ষিপ্র হচ্ছে নয়া জেনারেশনের ব্রহ্মসগুলি। আকৃতিতেও ছোট হচ্ছে। ফলে আরও সহজে যুদ্ধবিমানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যাবে সেগুলি। ২০২৬-এ নয়া উড়ান ভরতে চলেছে ব্রহ্মস এনজি। ভারতের নিজস্ব লাইট কম্ব্যাট এয়ারক্রাফট তেজসে (Light Combat Aircraft LCA Tejas) ও রুশ প্রযুক্তিতে নির্মিত ভারতের সুখোই -৩০ এমকেআই (Sukhoi-30MKI)-এর সঙ্গে জুড়ে দুশমনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি হচ্ছে ব্রহ্মস এনজি। ৬ মিটার লম্বা ও মাত্র ১.৬ টন ওজনের ব্রহ্মস এনজি আগের ব্রহ্মসের তুলনার প্রায় অর্ধেক ওজনের। আগে এই মিসাইলের ওজন ছিল প্রায় ৩ টন, দৈর্ঘ্যে ৯ মিটার লম্বা।
নেক্সট জেনারেশনের ব্রহ্মস এনজি প্রথমবারের মতো টেস্ট ফ্লাইটে উড়ান ভরবে ২০২৬-এ। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো তেজস বা সুখোই-এর সঙ্গে জুড়ে পরীক্ষা করা হবে তার হামলা চালানোর দক্ষতা। এই দুটি যুদ্ধবিমানও সেভাবেই তৈরি। ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে গঠিত ব্রহ্মস এয়েরোস্পেসের (BrahMos Aerospace) ডিরেক্টর জেনারেল জয়তীর্থ জোশি জানিয়েছেন, ঘাতক ক্ষমতা আগের মতোই থাকলেও নয়া প্রজন্মের ব্রহ্মস আরও কার্যকরী ও হালকা হচ্ছে। তিনি বলেন, “ব্রহ্মসের ঘাতক ক্ষমতাকে অটুট রেখে আমরা মিসাইলটিকে আরও উপযোগী ও দক্ষ করে তুলছি। এর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে স্টেট্ অফ দ্য আর্ট টেকনোলজি।” তিনিই জানান, আর এক বছরের মধ্যে প্রথমবার ফ্লাইট টেস্টের জন্য তৈরি হয়ে যাবে ব্রহ্মস এনজি। তবে নিরব্বিচ্ছিন্ন উৎপাদন শুরু হবে ২০২৭-এর মধ্যে।
হালকা ও নিখুঁতভাবে নিশানায় আঘাত করতে সক্ষম ব্রহ্মস সুপারসনিক মিসাইল এখন ভারতের গর্ব। বিদেশেও রপ্তানি শুরু হওয়ার পথে। আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশ ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখতে শুরু করেছে। প্রথমবারের জন্য ভারত ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশকে কোনও মিসাইল বিক্রির পথে হাঁটছে। সম্প্রতি দিল্লিতে এসেছিলেন ইন্দোনেশিয়ান প্রেসিডেন্ট। তাঁকে ব্রহ্মসের দক্ষতা বোঝানো হয়। দেখে তিনি এতটাই উৎসাহিত হন, যে দুই দেশের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিও সই হওয়ার পথে। ইতিমধ্যেই ফিলিপিন্স ৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সই করে ফেলেছে ব্রহ্মস কিনতে।
কেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের নয়নের মণি এই ব্রহ্মস? কী বিশেষত্ব রয়েছে এর?
ব্রহ্মস আসলে টু স্টেজ মিসাইল। এতে থাকে প্রপেলান্ট ইঞ্জিন যে কারণে শব্দের চেয়েও প্রায় তিনগুণ জোরে ছোটে এই সুপারসনিক মিসাইল। শত্রুর রেডারে ধরা পড়ে না এবং দূর থেকে নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানায় সক্ষম। যে কারণে যুদ্ধের ময়দানে এর জুড়ি মেলা ভার। এটিকে অপারেট করাও সহজ। একবার টার্গেট বেঁধে দিয়ে ফায়ার করে দিলেই চলবে। তারপর স্রেফ ‘ফায়ার এন্ড ফরগট’। মানে একবার চালিয়ে দিয়ে বাকি সব ভুলে যাও। নিজে থেকেই বেঁধে দেওয়া নিশানায় আঘাত করে শত্রুকে ছারখার করে দেবে ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই মিসাইল। ভারতের ভাঁড়ারে এরকম স্টেট্ অফ দ্য আর্ট সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল আরও থাকলেও মূলত চারটি কারণে ব্রহ্মস বাকিদের চেয়ে আলাদা
১. বাকিদের চেয়ে তিনগুণ জোরে ছোটে
২. পাল্লার দিক থেকে অন্যান্য মিসাইলের প্রায় ২.৫-৩ গুণ
৩. ৯ গুণ বেশি কাইনেটিক এনার্জি
৪. সিকার রেঞ্জ (seeker range) প্রায় তিন থেকে চারগুণ
ট্রান্সপোর্ট লঞ্চ ক্যানিস্টার ব্যবহার করে ব্রহ্মস মিসাইলকে মাটি থেকে, সমুদ্রের উপর কোনও যুদ্ধজাহাজ থেকে এমনকী ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন থেকেও ছোঁড়া যায় বলে ভারতীয় সেনার বিশেষ পছন্দের এই মিসাইল। সেই সঙ্গে এর ‘পিন পয়েন্ট অ্যাকিউরেসি’ বা নিখুঁত হামলা করতে সক্ষম বলে চিন-পাকিস্তানও এই মিসাইলকে বড্ড ভয় পায়।