নয়া দিল্লি: নতুন সংসদ ভবন (New Parliament) তৈরি। আগামী রবিবারই উদ্বোধন হতে চলেছে এই সংসদ ভবনের। অগস্ট মাসে বাদল অধিবেশন বসবে এই সংসদ ভবনেই। কিন্তু তাই বলে বাতিল করে দেওয়া হবে না পুরনো সংসদ ভবন। কর্তব্য পথের উপরে অবস্থিত পুরনো সংসদ ভবনকে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। সংসদের একটি বড় অংশকে জাদুঘরে (Museum) রূপান্তরিত করা হতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষও পুরনো সংসদ ভবন ঘুরে দেখতে পারবেন। তবে এই পুরনো সংসদ কীভাবে তৈরি হল, এর পিছনের কাহিনিই বা কী, তা জানেন?
ব্রিটিশরাজে প্রথমে কলকাতা (Kolkata) ছিল রাজধানী। পরে প্রশাসনিক কাজে সুবিধার জন্য রাজধানী দিল্লি(Delhi)-তে স্থানান্তরিত করে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময় থেকেই কোথায় সংসদ ভবন তৈরি হবে, তার জন্য জায়গা খোঁজা শুরু হয়। ১৯১২-এ তৈরি করা হয় তিন সদস্যের টাউন প্ল্যানিং কমিটি (Town Planning Committee)। এই কমিটিই সংসদ ভবনের জায়গা বাছাই থেকে নির্মাণ, যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কমিটির সদস্য ছিলেন লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জর্জ সুইন্টন, ইঞ্জিনিয়ার জেমস ব্রডি এবং স্থপতি এডউইন ল্যান্ডসির লুটিয়েন্স।
টাউন প্ল্যানিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, গভর্নমেন্ট হাউস, ওয়ার মেমোরিয়াল, পাবলিক রেকর্ডস অফিস, সেক্রেটারিয়েট এবং কাউন্সিল হাউস নির্মাণ করা হবে প্রাথমিক পর্যায়ে। গোটা কার্যপদ্ধতির উপরে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয় এডউইন ল্যান্ডসির লুটিয়েন্স এবং হারবার্ট বেকারকে।
গোটা দিল্লি ঘুরে, শেষে কনৌট প্লেস(Caunoght Place)-কে সংসদ ভবনের জন্য বাছাই করা হয়। এবার প্রশ্ন ওঠে যে কীরকম দেখতে হবে এই সংসদ ভবন। প্রশাসনিক কাজে সুবিধার জন্য কীসের আদলে তৈরি করলে সুবিধা হবে। ব্রিটিশ শাসনেও সেই সময় দেশে রাজার অভাব ছিল না। আর রাজা থাকলে রাজপ্রসাদও থাকবে। ব্রিটিশ শাসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে দেশের কোনও রাজপ্রাসাদের আদলেই সংসদ ভবন তৈরি করা হবে। রাজপ্রাসাদ খুঁজতেই মধ্য প্রদেশে যান হারবার্ট বেকার। সেখানে গোয়ালিয়রে সিন্ধিয়াদের জয়মহল রাজপ্রাসাদ দেখে মুগ্ধ হন তিনি। ওই রাজপ্রাসাদের আদলেই সংসদ তৈরির প্রস্তাব দেবেন, এমন সময়েই খবর পেলেন এক মন্দিরের।
মধ্য় প্রদেশের চম্বলের মোরেনা জেলার মিতওয়ানি গ্রামের একটি টিলার উপরে অবস্থিত ৬৪ যোগিনীর মন্দির। গোলাকার মন্দিরের চারিদিকে রয়েছে স্তম্ভ। কিন্তু প্রবেশ পথ একটাই। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে বাম দিক থেকে ঘুরতে শুরু করতে আবার সদর দরজাতেই পৌঁছে যাবেন।
১৯২১ সাল থেকে সংসদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বেলেপাথর বা লাইমস্টোন দিয়ে তৈরি করা হয় সংসদের প্রথম তলে থাকা ১৪৪টি স্তম্ভ। শুধুমাত্র পাথর কাটার জন্যই প্রায় ২৫০০ কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। ৬ বছর সময় লেগেছিল এই সংসদ ভবন তৈরি করতে। পুরনো সংসদ ভবন তৈরি করতে খরচ হয়েছিল মাত্র ৮৩ লক্ষ টাকা।