
নয়া দিল্লি: তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সংসদে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগ করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এই গুরুতর অভিযোগ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। মহুয়া মৈত্র এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে,একের পর এক বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই ইস্যুতে মহুয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন। বিজেপি সাংসদরা মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা এই গুরুতর অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর), নিশিকান্ত দুবের করা অভিযোগ লোকসভার এথিক্স কমিটিতে পাঠালেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। বর্তমানে লোকসভার এথিক্স কমিটির সভাপতি বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকর। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি এবার এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।
গত রবিবার এই অভিযোগ করেন নিশিকান্ত দুবে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এবং কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং একই দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ। নিশিকান্ত দুবে জানিয়েছেন, মহুয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাই। তাঁর আরেক পরিচয় তিন মহুয়ার পুরোনো বন্ধু। পরে অবশ্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদের জেরে দুজনের সম্পর্কতের অবনতি হয়েছিল।
নিশিকান্ত দুবের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের ওই আইনজীবী তাঁকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানি, রিয়েল-এস্টেট কোম্পানি হিরানন্দানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে, লোকসভায় তাঁর পক্ষে সওয়াল করেছেন তৃণমূল সাংসদ। এখনও পর্যন্ত লোকসভায় মহুয়া যে ৬১টি প্রশ্ন করেছেন, তার মধ্যে ৫০টিই দর্শন হিরানন্দানি এবং তাঁর ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে করা। তাঁর কাছে নাকি এর অকাট্য প্রমাণ আছে।
গত রবিবার, নিশিকানত দুবে এই চিঠির লেখার পরই, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহুয়া মৈত্র। সোমবার, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, নিশিকান্ত দুবে, জয় অনন্ত দেহদ্রাই এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। এই অভিযোগ এবং এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনে তাঁর মানহানি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহুয়া। তৃণমূল সাংসদের আরও দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে।
মহুয়ার দাবি, জয় অনন্ত দেহদ্রাইয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদের পর, সুপ্রিম কোর্টের ওই আইনজীবী তাঁকে অশ্লীল বার্তা পাঠিয়েছিলেন। পোষ্য কুকুর-সহ সরকারি বাসভবন থেকে তাঁর বেশ কিছু সম্পত্তি চুরিও করেছিলেন ওই আইনজীবী। অন্যদিকে, শুরু থেকেই নিশিকান্ত দুবের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর বিবাদ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহুয়া। বিশেষ করে নিশিকান্ত দুবের প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলায়, নিশিকান্ত দুবে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে দাবি মহুয়ার। আর সেই রাগেই তিনি এই অভিযোগ করেছেন। হিরানন্দানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থা সবসময় দেশের স্বার্থে সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে। ভবিষ্যতেও তা চালিয়ে যাবে।