নয়া দিল্লি: ভোটের আগে সম্ভবত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির শেষ বৈঠক। সেই বৈঠকেই নেওয়া হয় একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতে, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উত্পাদন ও গবেষণায় এটাই ভারতের ‘দ্য মোস্ট অ্যাম্বিশাস প্রজেক্ট’। দেশের মাটিতেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হবে ২০০টি ফিফথ জেনারেশন অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট। তৈরি করবে হ্যাল (HAL)। ডিজাইন বানাবে ডিআরডিও (DRDO)। এর জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কমব্যাট এয়ারক্রাফট মানে যুদ্ধবিমান। নজরদারি ও পণ্য পরিবহণের কাজেও সেনা বিমান ব্যবহার করে। এবার তৈরি করা হবে যুদ্ধ বিমান। স্টেলথ এয়ারক্রাফট। এটা হল যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত এমন একটা প্রযুক্তি যা কিনা শত্রুপক্ষের রেডারকে ফাঁকি দিতে পারে। এক কথায় বলতে গেলে, এই বিমান মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাদের মতো যুদ্ধ করে। একে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই বিমানে সেই প্রযুক্তি থাকবে।
ফিফথ জেনারেশন বা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মানে হল একদম লেটেস্ট টেকনোলজি। এই মুহূর্তে সারা দুনিয়ায় মাত্র ৪টে ফিফথ জেনারেশন ফাইটার এয়ারক্রাফট আছে। F-22 Raptor ও F-35A Lightning- আমেরিকা এই দুটো ফাইটার জেট ব্যবহার করে। চিনের আছে J-20, রাশিয়ার আছে Su-57। অর্থাৎ আমরা হতে চলেছি দুনিয়ার পঞ্চম দেশ যারা কিনা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বানাতে চলেছে।
এবার আসা যাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট। ভারতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমানের কথা সকলের জানা। তেজস হল লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট। যুদ্ধবিমান দু-ধরনের হয়। হেভি কমব্যাট ও লাইট কমব্যাট। লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট মানে ওজন কম। একটা ইঞ্জিন। ভার বহনের ক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যায় অস্ত্রশস্ত্র ও মিসাইল থাকে। হেভি কমব্যাট এয়ারক্রাফট মানে ওজন বেশি। দুটো ইঞ্জিন। বেশি লোড নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় এতে ইচ্ছেমতো অস্ত্রশস্ত্র ও মিসাইল ইনস্টল করা যায়। উদাহরণ রাফাল-সুখোই।
সেনার এই দু-ধরনের বিমানই প্রয়োজন হয়। লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফটে অপারেটিং কস্ট কম। একটা হেভি কমব্যাট এয়ারক্রাফটের খরচে অনেকগুলো লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট হয়ে যায়। এই দিয়ে যদি একটা বাহিনী বানিয়ে ফেলা যায় তাহলে সেটা একটা-দুটো হেভি কমব্যাট এয়ারক্রাফটের চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে। এই কারণেই আজ সারা দুনিয়ার কাছে তেজসের কদর। এবারে ভারত তৈরি করতে চলেছে মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট। এটা হবে এমন এক যুদ্ধবিমান যাতে লাইট ও হেভি এয়ারক্রাফট -দুটোরই ফিচারস থাকবে। ইঞ্জিন থাকবে দুটো। মানে সে তেজসের কাজও করবে। রাফালের কাজও করবে। আর মিডিয়াম ক্যাটিগরিতে ভারতে তৈরি যুদ্ধবিমান হবে অ্যাডভান্সড। মানে নিজের ক্ষেত্রে সেরা।
শুরুর দিকে এই বিমানে জেনারেল ইলেকট্রিকের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। পরে যখন স্কোয়াড্রন তৈরি হবে, তখন দেশের মাটিতেই আরও পাওয়ারফুল ইঞ্জিন ডেভেলপড হয়ে যাবে। গোটা প্রজেক্টে বেসরকারি সাপ্লায়াররাও থাকবেন। ফলে প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হবে বলেও ডিফেন্স ইঞ্জিনিয়াররা দাবি করছেন।
এবার প্রশ্ন হল কেন হঠাৎ এরকম বিমানের দরকার পড়ল ভারতের। বিশ্বে প্রথম ফিফথ জেনারেশন কমব্যাট এয়ারক্রাফট আমেরিকা তৈরি করে। কিন্তু ইদানিং চিন তাদের পিছনে ফেলতে চলেছে। ফলে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতেও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান থাকা দরকার বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাঁদের একজনের কাছে শুনলাম ভারতের অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট হবে ওয়ান সিটার। একজনই পাইলট থাকবেন। কিন্তু তিনি যখন যুদ্ধ করবেন তখন বিমান চালাবে কে? উত্তর হল এআই প্রযুক্তির সাহায্যে বিমান উড়বে অটো মোডে।
শুধু ফাইটার জেট তৈরির প্ল্যান করেই বসে নেই। বাড়ানো হচ্ছে দেশের মিসাইল শক্তিও। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর পরমাণু বিদ্যুত চালিত সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত থেকে মিসাইল ছুঁড়ে টার্গেট হিট করেছিল ভারত। সেটা ছিল লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে অন্যতম ধাপ। এবার আরও একটা চ্যালেঞ্জিং ধাপ পেরনোর পালা। ২০২৪ সালেই প্রতিরক্ষায় আরও এক মাইলস্টোন ছোঁয়ার অপেক্ষা
জলের ভিতরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করতে সক্ষম ক্রুজ মিসাইল এখন ভারতের ভাঁড়ারে। আর এই মিসাইল হাতে আসার অর্থ গোলাপি চতুর্ভুজ বা পিঙ্ক কোয়ার্ড্রিরালে ঢুকে পড়া
গোলাপি চতুর্ভুজের সুরক্ষা-
এর আগে ২০২৩ সালে নিউক্লিয়ার মিশন গ্রুপে এন্ট্রি হয় ভারতের। সেই সময়ও পরমাণু প্রযুক্তিতে বড় ধাপ পের করেছিল ভারত। ভারতের হাতে এসেছিল নিউক্লিয়ার শিল্ড। নিউক্লিয়ার শিল্ড কী? কেন এই প্রতিরক্ষা ব্যূহ এত গুরুত্বপূর্ণ?
স্থলভাগ থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়ে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা অনেক আগেই অর্জন করেছে ভারত। পরবর্তী কালে ভারতীয় বায়ুসেনাও পরমাণু হামলা চালানোর পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরমাণু অস্ত্র হাতে থাকলেই পরমাণু হামলার জবাব দেওয়া যায়, এমন নয়। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য যে কোনও পরমাণু শক্তিধর দেশেই একটি করে ‘কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ থাকে। কিন্তু কোনও দেশ পরমাণু হামলার শিকার হলে ধ্বংসলীলা এত সাঙ্ঘাতিক পর্যায়ে পৌঁছনোর আশঙ্কা থাকে যে, ‘কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। প্রথমে যারা পরমাণু হামলা চালাবে, তারা কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেমটা ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই চালাবে, এমনটাও ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে পাল্টা পরমাণু হামলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে আক্রান্ত দেশটি। তাই শুধুমাত্র দেশের মূল ভূখণ্ড বা স্থলভাগ থেকে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতায় সন্তুষ্ট হওয়া কাজের কথা নয় বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত। তাদের বক্তব্য এক দিক থেকে পরমাণু হামলা ধরে অন্যদিকে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি থাকা উচিত। নিউক্লিয়ার শিল্ড থাকলে ১০০০০৩৩% কম সময়ে পাল্টা পরমাণু হামলা চালানো সম্ভব। নিউক্লিয়ার শিল্ডের পর গোলাপি চতুর্ভুজ – প্রতি মুহূর্তে দুনিয়াকে শক্তি বোঝাচ্ছে ভারত।