
নয়া দিল্লি: স্টেশনে থিকথিকে ভিড়। তার মধ্যেই ঘোষণা হল, ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস। ব্যস, যে যেভাবে পারল, ব্য়াগপত্র তুলে ছুট লাগাল। আর এতেই বিপত্তি। মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান করা হল না। তার আগেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল ১৮ জনের। আহত আরও কমপক্ষে ১০ জন। কী হয়েছিল সেই মুহূর্তে? কেনই বা এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হল, তা তুলে ধরলেন কোনওমতে রক্ষা পাওয়া যাত্রীরাই।
১৮ বছর বয়সী শিবম শুক্লা। নয়া দিল্লি স্টেশন থেকে রাত ৯.১৫ মিনিটে তাঁর ট্রেন ছাড়ে। শিবমের সঙ্গে এসেছিল বন্ধু আয়ুষ তিওয়ারি। আয়ুষও তাদের সঙ্গে বেনারস যাচ্ছিল। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বন্ধুর। শিবম জানান, “রাতে যখন ধাক্কাধাক্কি, পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন তাঁর বন্ধু কোনওভাবে তাঁকে বাঁচাতে পেরেছিল, কিন্তু সে নিজে বাঁচতে পারেনি। ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ভিড়ের ধাক্কায় টেনে নিয়ে আমরা ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাই। সেখানে মানুষ সিঁড়িতে শুয়েছিল, তাদের উপরই মাড়িয়ে চলে যায় লোকজন। তোলার জন্য কেউ ছিল না।”
#WATCH | Delhi | “My mother died in the stampede. We were going to our home…,” says Pappu, a resident of Bihar’s Patna pic.twitter.com/t43PMPIEs5
— ANI (@ANI) February 15, 2025
দিল্লির সঙ্গম বিহার থেকে মহাকুম্ভে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল এক পরিবার, কিন্তু নয়া দিল্লি রেলস্টেশনে এসে তাদের পদপিষ্ট হওয়ার জোগাড়। ভিড়ের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা। কোনওমতে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। বলেন, “আমরা এক ঘন্টা ধরে ভিড়ের মধ্যে আটকে ছিলাম। খুব কষ্ট করে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পেরেছি।”
আরেক মহিলা যাত্রী বলেন, “প্ল্যাটফর্মে পা রাখারও জায়গা ছিল না। যাদের টিকিট ছিল না তারা ট্রেনের ভিতরে বসে ছিল, আর যাদের আসন সংরক্ষিত ছিল তারা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। একজন পুলিশ আমায় বলেন যে প্রাণ বাঁচাতে চাইলে এখান থেকে চলে যান।”
একজন যাত্রী জানান, পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটছে যখন, সেই সময় তিনি স্টেশনের ভিতরেই ছিলেন। তিনি দেখেন প্রচুর মানুষ ধাক্কাধাক্কি করে চলন্ত সিড়িতে ওঠার চেষ্টা করছেন ব্যাগ নিয়ে। একে অপরের গায়ের উপরে উঠে যাচ্ছেন, পড়ে যাচ্ছেন।ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে, তিনি কোনওমতে সিঁড়ি থেকে সরে যান। ওভারব্রিজের উপরে ব্যাপক ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তিনি বলেন, “আমি ভিড় থেকে কিছু লোককে টেনে বের করলাম। কিন্তু চোখের সামনে সবাই একে অপরকে মাড়িয়ে দৌড়াতে লাগল। অমানবিক দৃশ্য ওটা। ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সিঁড়ি দিয়ে লোকজন পড়ে গেল।”
সূত্রের খবর, প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস যখন ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন প্ল্যাটফর্মে প্রচুর লোক জড়ো হয়েছিল। পাশের প্ল্যাটফর্মগুলিতে আসার কথা ছিল স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী। দুটি ট্রেনই দেরিতে চলছিল। এই কারণে ওই ট্রেনের যাত্রীরাও ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভিড় করেছিলেন, ট্রেনে ওঠাক চেষ্টা করছিলেন। পাশের প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসার ঘোষণা হতেই বিপত্তি ঘটে।
তথ্য অনুযায়ী, রেল প্রতি ঘন্টায় ১৫০০টি জেনারেল টিকিট বিক্রি করেছিল গতকাল। ফলে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম এবং ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে এসকেলেটরের কাছে পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ জনের।