সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) সঙ্গে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Election strategist Prashant Kishor) বৈঠক নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই তীব্র চাপানউতর চলছিল রাজনৈতিক মহলে। এমনকী শীঘ্রই তিনি কংগ্রেসে (Congress)যোগ দিচ্ছেন বলেও ইঙ্গিত মিলতেও শুরু করেছিল। সূত্রের খবর, এদিন কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে পিকে-কে সরাসরি দলে যোগদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রশান্ত কিশোরও কংগ্রেসে যোগদান করার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বলে খবর। রাজনৈতিক ময়দানে কংগ্রেসের দুর্বলতা কাটিয়ে দলের পুনরুত্থানের জন্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী কী করা উচিত তারও ‘ব্লু প্রিন্ট’ এদিন কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরেন পিকে। এই নয়া রাস্তায় হাঁটালে ২০২৪ সালের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কংগ্রেস সহজেই এগিয়ে যেতে পারবে বলে মত এই পোড় খাওয়া রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের। তবে কোনও পরামর্শদাতা নয়, দলে একেবারে নেতার আসনই পিকে-কে দিতে চাইছে কংগ্রেস।
সূত্রের খবর, চব্বিশের ভোট যুদ্ধই এদিন কংগ্রেস-পিকে বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল। এমনকি শক্ত হাতে রাহুল-সোনিয়ারা কীভাবে আসন্ন লোকসভার ভোট বৈতরণী পার করতে পারেন সে বিষয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন প্রশান্ত। পিকের সমস্ত পরামর্শই যে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে দল তা এদিনের বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের কথাতেই স্পষ্ট। শতাব্দী প্রাচীন দলের এই প্রবীন নেতা সাফ জানিয়েছেন, পিকে-র দেওয়া সমস্ত পরামর্শ মানতে, পাশাপাশি এই বিষয়ে দলের তরফে কী কী করণীয় তা খতিয়ে দেখতে একটি ছোট কমিটিও তৈরি করা হবে। এদিন রাহুল-সোনিয়ার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গেও আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে প্রশান্তকে। প্রসঙ্গত, দেশব্যাপী ভরাডুবির মাঝেও কংগ্রেসের পুনরুত্থানের বিষয়ে বারেবারেই সদর্থক চিন্তা করতে দেখা গিয়েছে পিকে-কে। গত বছরের শেষ থেকেই চলছিল আলোচনা। পিকে-কে দলে নিতে একদিকে যেমন বরাবরই আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে হাত শিবিরের নেতাদের, তেমনই কংগ্রেস প্রীতির কথাও প্রায়শই প্রকাশ্যে বলতে শোনা গিয়েছে প্রশান্তকে। এমতাবস্থায় এদিনের বৈঠক যে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কিশোর-পরামর্শকে বর্তমানে কংগ্রেস যে ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তাতে দলে তাঁর যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এদিকে একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেসের লাগাতার ভরাডুবির দিকে নজর রেখে পিকে মনে করছেন গোটা দেশের রাজনীতির ময়দানেই আগের থেকে অনেকটাই কোণঠাসা কংগ্রেস। গোটা দলটাই কার্যত বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছে। তাই হাত শিবিরের স্বাস্থ্য়োদ্ধারের জন্য গোটা সংগঠনেরই আগাপাশতলা বদলে ফেলতে চাইছেন তিনি। সরাসরি বদল চাইছেন শীর্ষ নেতৃত্বের। এই কথা বারেবারেই আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দিয়েছেন পিকে। কিন্তু একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী পরামর্শদাতা প্রশান্তকে শুরু থেকে ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ হিসাবে মানতে খানিক দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায় কংগ্রেস হাইকমান্ডকে। আর এখানেই বাড়ছিল চাপানউতর। তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলে কার্যত কোমায় চলে যাওয়া কংগ্রেসের কাছে শেষ থেকে শুরু করা ছাড়া যে আর কোনও রাস্তাই খোলা নেই তা মানছেন সকলেই। প্রশ্ন উঠে শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও। আর এখানেই পিকের হাত ধরে যে আইসিএইউ-তে থাকা দলে নতুন করে অক্সিজেনের আমদানি হতে পারে তা ভালোই বুঝেছে রাহুল ব্রিগেড। আর সেই কারণেই এদিনের বৈঠকে একেবারে ‘কংগ্রেস নেতা’ হওয়ার প্রস্তাব চলে গিয়েছে পিকে-র কাছে, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।