বাহানাগা: একটা বিকট শব্দ করে জোরে ঝাঁকুনি। তারপরই সব ওলট-পালট হয়ে গেল। এক নিমেষে অন্ধকার নেমে আসে ২ জুনের আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandel Express) যাত্রী থেকে তাঁদের পরিবারের জীবনে। তারপর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা হতে চলল। কিন্তু, এখনও নিখোঁজ বহু যাত্রী। রেললাইনের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে যাত্রীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী। যেমন, রবিবার এক মর্মান্তিক দৃশ্য উঠে এল বেঁকে-টেরে যাওয়া রেললাইনের উপর (Bahanaga)। রেললাইনের উপর দোমড়ানো-মোচড়ানো বগিগুলির পাশেই পড়ে রয়েছে এক শিশুকন্যার ফ্রক। হয়ত শিশুকন্যাটি পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিল বা চিকিৎসা করাতে দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছিল। তাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল পরিবারের। কিন্তু, এক নিমেষেই সব ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে! ফ্রকটি যেভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেললাইনের উপর পড়ে রয়েছে, তা স্বাভাবিকভাবেই চোখে জল এনে দেবে।
ফ্রক জামাটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, শিশুকন্যাটির বয়স হবে বড়জোর ৫-৬ বছর। কেবল ফ্রকটি পড়ে রয়েছে। ফ্রকটির আবার একটি হাতা কাটা। ফ্রকটির পাশে পড়ে রয়েছে একটি স্কুল ব্যাগ। আর তার পাশে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খেলনা। এই সবকিছুই যে শিশুকন্যাটির তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু, যার ফ্রক, এত খেলনা, সে-ই ‘অ্যাঞ্জেল’ কোথায়? কে জানে! আদৌ কি শিশুকন্যাটি বেঁচে রয়েছে? তার পরিবারই বা কোথায়? কেউ জানে না।
মর্মান্তিক দৃশ্যের এখানেই শেষ নয়। যাত্রীদের এরকম আরও অনেক সামগ্রী রেললাইনের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আবার রাত হলেই স্বজনদের খোঁজে আসা তাঁদের আত্মীয়দের আর্তনাদ, হাহাকার আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে ওঠে। সার দিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহের প্লাস্টিকে মোড়ক খুলে স্বজনদের খোঁজ চালাচ্ছেন অভিশপ্ত করমণ্ডলের যাত্রীদের অসহায় আত্মীয়রা। সবমিলিয়ে, যেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে বাহানাগা চত্বর।