
নয়া দিল্লি: শুক্রবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘুম কেড়েছে সাধারণ মানুষের। শুক্রবার সন্ধে ৭টা নাগাদ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ও মালগাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০০ ছুঁইছুঁই। আহত কমপক্ষে ৭৪৭ জন যাত্রী। দুর্ঘটনার পরই এই করমণ্ডল এক্সপ্রেস নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে হাজারো প্রশ্ন জেগেছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের অন্যতম পুরনো ট্রেন এই করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এই ট্রেনের যাত্রাও সাম্প্রতিক নয়, ৪৬ বছর আগে শুরু হয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রা। ১৯৭৭ সালের ৬ মার্চ থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
ব্রিটিশ শাসনে দেশের অন্দরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির জন্যই চালু করা হয়েছিল রেল পরিষেবা। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ডিভিশনে ভাগ করে দেওয়া হয় ভারতীয় রেলওয়ের রুটকে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে বরাবরই জনপ্রিয় ছিল। ৮০ ও ৯০-র দশকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়েতে অভিজাত ট্রেন হিসাবে পরিচিত ছিল দুটি ট্রেন, সেটি হল- রাজধানী এক্সপ্রেস ও করমণ্ডল এক্সপ্রেস। উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনীদের যাতায়াতের জন্য যেখানে ভরসা ছিল রাজধানী, সেখানেই দক্ষিণে যাওয়ার ক্ষেত্রে গরিব, মধ্য়বিত্ত শ্রেণি থেকে ধনী মানুষেরা চোখ বুঝে ভরসা করতেন এই করমণ্ডল এক্সপ্রেসকেই।
দাক্ষিণাত্যের সবথেকে শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল চোল রাজাদের। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত চোল সাম্রাজ্যের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। চোল রাজারা দক্ষিণ ভারতে এসে শাসন প্রতিষ্ঠার পর ওই অঞ্চলের নাম দেন ‘চোলমণ্ডলম’। সেই সময় থেকেই দক্ষিণ ভারত চোলমণ্ডলম হিসাবে পরিচিত ছিল। পরে ব্রিটিশ শাসকরা যখন ভারতে আসেন, তখন তারা দাক্ষিণাত্যের ওই অঞ্চলের নাম কী, জানতে চান। জবাব মেলে, চোলমণ্ডলম। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকরা ভুল শোনেন, চোলমণ্ডলম অপভ্রংশ হয়ে পরিণত হয় করমণ্ডলমে। করমণ্ডল উপকূলের নামকরণও এখান থেকেই হয়।
ব্রিটিশ শাসকদের প্রথমে রাজধানী ছিল কলকাতা। ফলে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই শহর। অন্যদিকে, বাণিজ্য়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দক্ষিণ ভারতও। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তামিলনাড়ুকে রেলপথে জুড়তেই চালু করা হয় একটি বিশেষ ট্রেন। নাম দেওয়া হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বিগত ৪৬ বছর ধরে এই রুটেই চলছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। অতীতেও একাধিকবার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। তবে শুক্রবারের দুর্ঘটনাকে ভারতীয় রেলের দুর্ঘটনার ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা বলেই গণ্য করা হচ্ছে।