মুম্বই: বুধের সকালে হঠাৎ করে কিছু অপ্রত্যাশিত অতিথি চলে আসবেন তা হয়ত বুঝে উঠতে পারেননি মহারাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী। অতিথিদের কীভাবে সামলে ওঠার আগেই মন্ত্রীমশাইকে গাড়িতে তুলে নিয়ে নিজেদের দফতরের দিকে রওনা দিয়েছেন ইডি আধিকারিকরা (Enforcement Directorate)। যাঁকে জেরার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা নবাব মালিক (Nawab Malik)। আজ সকালেই কুখ্যাত ডন দাউদ ইব্রাহিম (Dawood Ibrahim) ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নবাবকে নিজেদের দফতরে নিয়ে গিয়েছেন। সকাল ৭ টা নাগাদ এনসিপি নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সকাল ৮ টা থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
বিজেপি বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে বারবার কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। নবাবের ঘটনাতেও তাঁর অন্যথা হয়নি। এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার নবাবের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। “নবাব মালিক অত্যন্ত স্পষ্টভাষী, আমরা নিশ্চিত ছিলাম তাঁকে সমস্যা ফেলার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হবে। বিজেপির বিরুদ্ধে যদি কোনও মুসলিম ব্যক্তি সরব হন, তখনই তারা তাঁকে দাউদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি যখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখনও তাঁরা আমাকে দাউদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। যাঁরা কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে মুখ খুলছেন তাদের এইভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে হেনস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” এনসিপি কর্মীরা দক্ষিণ মুম্বইয়ের ব্যালার্ড পিয়রের ইডি দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে হাওয়ালা সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে নবাব মালিকের নাম প্রথম উঠে আসে। দাউদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলার তদন্ত করছে ইডি। ইকবাল মিরচি, ছোটা শাকিল, হাসিনা পার্কার এবং জাভেদ চিকনার মত দাউদের সহযোগীদের হাওয়ালার মাধ্যমে বেআইনিভাবে টাকা পাচারের প্রমাণ রয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, পাচার করা অর্থ তোলাবাজি, মাদক পাচার ও নানা বেআইনি কাজ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্প্রতি এই মামলাতে মুম্বইয়ের একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে ইডি। দাউদ ইব্রাহিমের প্রয়াত বোন হাসিনা পারকরের বাড়িতেও গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। জানা গিয়েছিল পঞ্জাবে ডি-কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতে নাশকতা ছড়ানোর পরিকল্পনাও করতে পারে বলেই মনে করছে গোয়েন্দারা। চলতি মাসেই ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণে প্রধান অভিযুক্ত আবু বকরকে আরব আমিরশাহি থেকে আটক করা হয়েছিল। আবু বকর দাউদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেই জানেন সকলে। এই মামলায় মহারাষ্ট্রের মন্ত্রীকে জেরা করা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখন শেষমেশ নবাবের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।