
পটনা: বিহারের সবচেয়ে বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকার রেকর্ড তাঁর দখলে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আগামী ৫ বছরও তাঁকেই দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আজ (১৪ নভেম্বর) যে ফল ঘোষণা হয়েছে, সেখানে এনডিএ ঝড়ে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। আর এদিনের ফলের পর আলোচনার কেন্দ্রে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বিহারে তাঁর নামে পোস্টার পড়েছে। যেখানে তাঁকে ‘টাইগার আভি জিন্দা হ্যায়’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপির পাশাপাশি নজরকাড়া ফল হয়েছে নীতীশের দল জেডি(ইউ)-র। কিন্তু, জানেন কি এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি নীতীশ । শুধু এবার নয়, ২০০০ সালে নীতীশ কুমার যখন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন, তখনও বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। আসলে গত ২৫ বছর বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেননি তিনি। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকলেন কীভাবে?
একটু পিছন ফিরে দেখা যাক। ১৯৮৫ সালে প্রথমবার বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন নীতীশ। হারনত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই আসন থেকেই শেষবারের মতো বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ১৯৯৫ সালে। কিন্তু, জিততে পারেননি। তারপর আর কখনও বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, তাহলে নীতীশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলেন কীভাবে? আসলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও বিহারের বিধান পরিষদের সদস্য। সংসদে যেমন লোকসভা ও রাজ্যসভা রয়েছে। যেখানে লোকসভার সাংসদদের সরাসরি ভোটাররা নির্বাচিত করেন। আর রাজ্যসভার সাংসদরা নির্বাচিত হন বিভিন্ন রাজ্যের বিধায়কদের ভোটে। তেমনই, ভারতে ৬টি রাজ্যে বিধান পরিষদ রয়েছে। বিধানসভার উচ্চকক্ষ। বিধান পরিষদের সদস্যদের সরাসরি ভোটাররা নির্বাচিত করেন না। বিধানসভায় রাজনৈতিক দলগুলির আসনের উপর ভিত্তি করে বিধান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তাঁরা রাজ্যের মন্ত্রী হতে পারেন। আবার একজন বিধান পরিষদের সদস্যের মেয়াদ ৬ বছর। সংসদের রাজ্যসভার সাংসদের মতোই।
২০০০ সালের ৩ মার্চ প্রথমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ। তখন তিনি বিধানসভা কিংবা বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন না। আট দিনের মধ্যে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর ২০০৫ সালে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। সেইসময়ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। তার বদলে বিধান পরিষদের সদস্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৪ সালের ২০ মে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবেই মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকেছেন। আবার ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তারপর একাধিকবার জোট বদলেছেন নীতীশ। কখন লালুপ্রসাদের দলের হাত ধরেছেন। কখনও এনডিএ-তে ফিরে এসেছেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী তিনিই থেকেছেন। শুক্রবার বিহার বিধানসভার ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বিজেপি ও জেডি(ইউ)-র আসন নজরকাড়া। বছর চুয়াত্তরের নীতীশই ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে। এবারও তিনি বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নিতে চলেছেন। কারণ, ২০২৪ সালে বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে ফের নির্বাচিত হন তিনি। যার মেয়াদ শেষ হবে ২০৩০ সালে।