তিস্তা রায়চৌধুরী: বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ‘ফোটোফিনিশ’ জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এরপরেই, জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো (Mamata Banerjee)। এই আবহে সোমবার সটান রাজধানীতেই হাজির হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ দিনের এই দিল্লি সফরে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে যেমন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত হয়েছে, তেমনই সাক্ষাতের সম্ভবনা রয়েছে একাধিক বিরোধী নেতার।
আনুষ্ঠাানিকভাবে এখনই বিরোধী বৈঠক না হলেও মমতার সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতৃত্বদের দেখা সাক্ষাত্ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অ-বিজেপি শক্তিগুলির জোট পরিকল্পনায় মমতাই মুখ হবেন কি না তা নিয়েও জোর গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে। আর এই পরিস্থিতিতেই মুখের নয়, মানুষের রাজনীতি করার ইঙ্গিত দিলেন অন্যতম বিজেপি বিরোধী দল আরজেডি-র রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র মনোজ ঝাঁ (Manoj Jha)।
কোভিডকালে দেশবাসীর মৃত্যু এবং দূরবস্থার কারণে সংসদের অধিবেশন কক্ষে ক্ষমা চেয়ে এই আরজেডি সাংসদ সম্প্রতি নেটমাধ্যমে প্রবল ভাইরাল হয়েছেন। রাজ্যসভার অধিবেশনেই দাঁড়িয়ে সরকারের তরফে দেশের জনগণের কোভিডের বর্তমান পরিস্থিতির কারণ হিসেবে আত্মপক্ষকেই ‘দোষী’ সাব্যস্ত করেছেন বর্ষীয়ান সাংসদ (Manoj Jha)। চেয়েছেন ক্ষমাও। কেন এমন পদক্ষেপ সে প্রসঙ্গে সাংসদ স্পষ্ট বললেন, “এই ক্ষমা দেশবাসীর কাছে সরকারের চাওয়া উচিত। যেহেতু, সরকারের তরফে এমন কোনও পদক্ষেপ এখনও করা হয়নি, তাই আমি বিরোধী পক্ষ হিসেবে ক্ষমা চাইলাম যে কোভিডের এই আকালে আমরা ক্ষমতায় বসে থেকেও কিছুই করতে পারিনি।”
জাতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে অন্যতম সর্বাধিক চর্চিত নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে বিহারের সাংসদ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে বড় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। কিন্তু, আমাদের দায়িত্ব হবে মানুষের কাছে পৌঁছনো। আত্মকেন্দ্রিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি যা নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর দল অনুসরণ করে তা কাম্য নয়। মুখের রাজনীতি চাই না। কারণ, মুখের অভাব নেই আমাদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ার, রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব—মুখের অভাব কোথায়? জরুরি এটা নয়, বরং জরুরি ঘটমান রাজনীতি। সমস্যা সমাধানের রাজনীতি। সাত বছর মুখের রাজনীতি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ফল কী হল? বিরোধী শক্তির ক্ষয়, রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষয়, একক দলীয় আত্মপ্রতিষ্ঠা। ব্যক্তি রাজনীতি চাই না। নেতা আসবেন। গ্রহণীয় হবেন, ক্ষমতায় থাকবেন। চলে যাবেন। কাজটা থেকে যাবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪- দিল্লি দখলের লড়াইতে ক্রমেই ‘কাছাকাছি’ আসছে অ-বিজেপি শক্তিগুলি। মঙ্গলবার, ইতিমধ্যেই মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকও হয়েছে এ দিন। কমল নাথের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কংগ্রেসের আরেক বরিষ্ঠ নেতা আনন্দ শর্মার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মমতা।
বুধবার, তিনি কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেন বলে জল্পনা। আবার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গেও হতে পারে সাক্ষাত্ বলেই সূত্রের খবর। সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ে তৃণমূলের শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন শরদ পাওয়ার, পি চিদম্বরম, শরদ যাদব, সুপ্রিয়া সুলে, জয়া বচ্চন প্রমুখ জাতীয় স্তরের নেতৃত্বরা।
মোদীবিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে জাতীয়স্তরে জাজ্বল্যমান উপস্থিতি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের। রয়েছে শরদ পওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি। রয়েছে বামশক্তিও। রাজনীতিতে, পৃথকভাবে পরিচয় তৈরিতে সক্ষম হয়েছে কেজরীবালের আম আদমি পার্টি, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি-সহ বিহারের তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো আঞ্চলিক দলগুলিও।
কিন্তু, বিরোধী শক্তি হিসেবে আরজেডি ঠিক কতটা সফল? বিহার নির্বাচনের পর আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব কি পারবেন ‘মোদী-বিকল্প মুখ’ হতে? উত্তরে, স্পষ্টবক্তা অধ্যাপক বলেন, “বিহারের রাজনীতি কি সেই কথা বলে আদৌ? রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন, সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া, সরকারকে সওয়াল করা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে সাধারণের পাশে দাঁড়ানো এসবই তিনি নিজে করছেন। নরেন্দ্র মোদী যখন প্রথম গুজরাতের মুখ্য়মন্ত্রী হন, তখন তিনি কী করেছিলেন ক্ষমতায় বসে?”
সাংসদের কথায়, “একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি, সেই ব্যক্তিই বড় রাজনীতিক যিনি সবচেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে থাকেন, তাঁদের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। বয়স সত্তর পেরলেই, কেউ বিচক্ষণ রাজনীতিক হবেন এমন নয়, বরং যিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন ও সঞ্জিত হন তিনি যথার্থ রাজনীতিক।”
দেখুন ভিডিয়ো:
Rajya Sabha member @manojkjhadu's remarks during the discussion on the management of COVID-19 in Indiahttps://t.co/8LiRNa4c2Q
— Rajya Sabha TV (@rajyasabhatv) July 20, 2021
আরও পড়ুন: এক্সক্লুসিভ ঐশী: আমিই সরকার, আমিই দশ, আমিই দেশ, ইজ ইক্যুয়াল টু মোদীজী