
TV9 বাংলা ডিজিটাল: দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে দীপাবলি। আর এই উৎসব তো সে যে উৎসব নয়, দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। আলোর ঝর্ণাধারা আনতে দেশবাসীর ভরসা আতশবাজিই (Fire Cracker)। প্রতি বছরই পরিবেশপ্রেমীরা বায়ুদূষণ রুখতে আতশবাজি বর্জনের কথা বললেও শেষ অবধি তা কানে পৌঁছায় না। তবে করোনাভাইরাসের (Coronavirus)কারণে বাকি বছরগুলির তুলনায় এই বছরের চিত্রটা অনেকটাই আলাদা।
সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) জুড়ে চিকিৎসক থেকে শুরু করে পরিবেশবিদরা আবেদন জানিয়েছেন, অন্তত এই বছর যেন আনন্দ উৎসব থেকে আতশবাজি বাদ রাখা হয়। করোনা আক্রান্ত ও যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন-উভয়ের জন্যই ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে বাজির বিষাক্ত ধোঁয়া। করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় এমনিতেই চিন্তার ভাজ চিকিৎসকদের কপালে। তার উপর যদি আতশবাজির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও বাড়ে, তবে প্রাণ সঙ্কট তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্য়েই বেশ কয়েকটি রাজ্যে দীপাবলিতে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রবিবার রাজস্থান (Rajasthan)সরকার ঘোষণা করে জানায় যে, আসন্ন দিওয়ালি ও বিয়ের মরশুমে কোনওরকম আতশবাজি পোড়ানো যাবে না। আতশবাজি বিক্রি বা পোড়ালে মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হবে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট (Ashok Gehlot) সাধারণ মানুষের কাছে আতশবাজি পোড়ানো থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়ে বলেন,”এই কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনরক্ষা করা সরকারের মূল লক্ষ্য।”
রাজস্থান সরকারের পথ অনুসরণ করেই ওড়িশা (Odisha) সরকার মঙ্গলবার জানায়, আগামী ১০ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর অবধি রাজ্যে আতশবাজি বিক্রয় ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে,”রাজ্যে শীতের প্রবেশ হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও বর্তমান ঋতুতে আতশবাজি পোড়ানোর ফলে যে ভয়ানক ক্ষতি হতে পারে, তার কথা মাথায় রেখেই আগামী ১০ থেকে ৩০ নভেম্বর অবধি রাজ্যে আতশবাজি বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হল।” পাশাপাশি বাজি বিক্রি বা ব্যবহার করতে দেখলে এক লাখ টাকা অবধি জরিমানার কথাও জানিয়েছে ওড়িশা সরকার।
সোমবার হরিয়ানা (Haryana) সরকার জানায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা আতশবাজি রাখা ও বিক্রয় করা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাজ্যের তরফ থেকে প্রতিটি জেলার ডেপুটি কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা এই বিষয়ে যেন কড়া নজরদারি চালায় ও বেআইনি আতশবাজি বিক্রি রুখতে কড়া পদক্ষেপ করে।
দিল্লিতে (Delhi)আতশবাজিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হলেও কেবল “গ্রিন” আতশবাজিতেই (Green Fire Cracker) ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই বাজিতে দূষণের মাত্রা কম হওয়ায় বিকল্প হিসাবে এই বাজিকেই ব্যবহারের উপায় বাতলে দিয়েছেন সরকার। দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি (DPCC), জেলাশাসক ও দিল্লি পুলিসকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যে যেন কেবল গ্রীন আতশবাজিই বিক্রি হয়, তা নিশ্চিত করতে।
সরকারের তরফ থেকে কড়া মনোভাব দেখানো না হলেও দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই করোনা পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে রাজ্যবাসীর কাছে আতশবাজি বর্জন করার অনুরোধ করেন। তিনি আতশবাজির বিরুদ্ধে একটি অভিযানও শুরু করেছেন। রাজ্যে কেবল গ্রিন আতশবাজিই উৎপাদন ও বিক্রয় হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে তিনি রাজ্যের নানা জায়গা ঘুরে দেখেন।
দুর্গাপুজোর মতোই দীপাবলিও রাজ্যবাসীর হাতেই ছেড়ে দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার কালীপুজোর ব্যবস্থাপনা, বিসর্জন ও আতশবাজির ব্যবহার নিয়ে পুলিস ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় (Mamata Banerjee)। বৈঠক শেষে তিনি জানান, কালীপুজোয় আতশবাজিতে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হলেও বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই বছর আতশবাজি ছাড়াই দীপাবলী পালন করা শ্রেয়।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Banerjee) বলেন,”সকলের সহযোগিতায় যে ভাবে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে, একই ভাবে আতশবাজি বর্জন করে কালীপুজো পালন করতে হবে। করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্ট ছাড়াও নানা সমস্যা রয়েছে। হাসপাতাল ছাড়া বাড়িতেও বহু রোগী চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করা উচিত। বাজি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ তাদের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে, এই মানবিক দিকটি বিচার করেই আতশবাজি পোড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে।”
নিষিদ্ধ ও নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার উপরের বাজি না ব্যবহার করার আবেদনও জানানো হয় সরকারের তরফে। পুলিসের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবছরের মতোই এইবছরও নিষিদ্ধ বাজি আটক করার জন্য অভিযান চালানো হবে।
তবে দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও রাজ্য় সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবে ফের আদালতের দারস্থই হয়েছেন হাওড়ার বাসিন্দা অজয় কুমার দে। তিনিই দুর্গাপুজো নিয়ে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। এবার কালীপুজো, কার্তিক পুজো, ছটপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোয় মণ্ডপে ভিড় নিষিদ্ধ ও বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো বন্ধের আর্জি জানিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে (Kolkata High Court) জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত কোন পক্ষে যায়, তার দিকেই তাকিয়ে পরিবেশপ্রেমীরা।