
ফাইল চিত্র।Image Credit source: X
নয়া দিল্লি: উন্নয়নের বছর ছিল ২০২৫। বছরের শেষলগ্নে এসে দেশের উন্নয়নের যাত্রার চিত্র তুলে ধরা হল। পরিকাঠামো থেকে শুরু করে রেলপথ, বিমানবন্দর- তৈরি হয়েছে অনেক কিছু নতুন। এতদিন ধরে যা স্বপ্ন ছিল, তা এখন কোটি কোটি মানুষের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে, উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, কমেছে দূরত্ব।
চলতি অর্থবর্ষে পরিকাঠামোয় সরকারের বিনিয়োগ বেড়েছে ১১.২১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০৪৭ সালের মধ্যে প্রতি ১২ থেকে ১৮ মাসে জিডিপি ১ ট্রিলিয়ন ডলার করে বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে পরিকাঠামো অর্থনীতির উন্নয়নের ভিত হয়ে উঠেছে।
মিজোরাম সংযুক্তিকরণ-
ইতিহাস তৈরি করে এই বছরই ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হল মিজোরাম। ৫১ কিলোমিটার বৈরাবি-সাইরং রেলওয়ে লাইন তৈরি হয় ৮ হাজার কোটি টাকা খরচে। রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে আইজল যুক্ত হল সরাসরি। ইমার্জেন্সি পরিষেবা, মিলিটারি সামগ্রী, শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ – সবই তৈরি হয়েছে মিজোরামে রেলপথ সংযুক্ত হয়ে। মিজোরামে উৎপাদন হওয়া বাঁশ, ফুল ও মরশুমি ফল-শাক-সবজিও এখন অল্প খরচেই গোটা দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম ফ্রেট চলাচল হয়, অসম থেকে আইজলে ২১টি সিমেন্ট বোঝাই ওয়াগন নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশ্বের উচ্চতম রেলওয়ে ব্রিজ উদ্বোধন-
এই বছরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন হয়েছে বিশ্বের উচ্চতম রেলওয়ে ব্রিজ, চেনাব ব্রিজ। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রজেক্টের অধীনে এই রেলব্রিজ তৈরি হয়েছে। এই ব্রিজের দৌলতে কাশ্মীরের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে।
দেশের প্রথম ভার্টিকাল লিফ্ট সি ব্রিজ উদ্বোধন-
ভারতের পরিকাঠামোর উন্নয়নে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে নতুন পামবান ব্রিজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তামিলনাড়ুতে এই ব্রিজের উদ্বোধন করেন। এটি দেশের প্রথম উল্লম্ব সি-ব্রিজ, যা জাহাজ আসলে মাঝখান থেকে খুলে উঠে যাবে। ঠিক যেমনটা আমেরিকায় গোল্ডেন গেট ব্রিজ বা লন্ডনে টাওয়ার ব্রিজ।
দেশের প্রথম কন্টেনার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের উদ্বোধন-
এই বছরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিজ়িনজাম ইন্টারন্যাশনাল ডিপ ওয়াটার মাল্টিপারপাস সি-পোর্টের উদ্বোধন করেন। ৮৯০০ কোটি টাকা খরচ করে এই বন্দর তৈরি করা হয়েছে।
বিহারে প্রথম বন্দে মেট্রোর সূচনা-
বিহারের প্রথম বন্দে মেট্রো, যা নমো ভারত র্যাপিড রেল নামে পরিচিত, তার সূচনা হয়। পটনা থেকে জয়নগরকে জুড়েছে এই মেট্রো। বেড়েছে যোগাযোগ। আট ঘণ্টার বদলে মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘণ্টাতেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। সম্পূর্ণ বাতানুকুল এই ট্রেন।
জেড মোর সুড়ঙ্গ-
শীতকালে জম্মু-কাশ্মীরের একাধিক অংশের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সারা বছর যোগাযোগ বজায় রাখতে জম্ু-কাশ্মীরে জেড মোর টানেলের (Z-Morh Tunnel) উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন করা এই প্রজেক্টের দৌলতে সোনমার্গের সঙ্গে সারা বছর সংযোগ স্থাপন এবং লাদাখে যাওয়া আরও সহজ হয়েছে। ধস প্রবণ শ্রীনগর-লেহ হাইওয়েতেও যাতায়াত সহজ হয়েছে। এতে পর্যটন শিল্প যেমন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই প্রতিরক্ষা সামগ্রী নিয়ে যেতেও সুবিধা হচ্ছে।
জম্মু থেকে শ্রীনগর রেলপথ, দিল্লি-মিরাট র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমও চালু হয়েছে এই বছর।
নবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- এই বছরই নভি মুম্বই বিমানবন্দরের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করা হয়। এতে মুম্বইয়ের বর্তমান বিমানবন্দরগুলির উপরে চাপ কমছে।
আইএনএস হিমগিরি ও আইএনএস উদয়গিরি-
২০২৫ সালটা নৌসেনার কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছরের অগস্টে দেশের দুই সেরা স্টেলথ যুদ্ধজাহাজ, আইএনএস হিমগিরি ও আইএনএস উদয়গিরির সূচনা করা হয়।
এছাড়াও বেঙ্গালুরুতে ইয়েলো লাইনের পরিষেবা শুরু, ছত্তীসগঢ়ের নকশাল অধ্যুষিত অঞ্চলে বিদ্যুৎ চালু হওয়া, মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলিতে বাস পরিষেবা চালু, ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে মোবাইল টাওয়ার চালু হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১৬০টিরও বেশি বিমানবন্দর চালু হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশে ৩০০-৪০০টি বিমানবন্দর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভারতীয় রেলওয়েতেও ৯৯ শতাংশ ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে ভারতের মেট্রো নেটওয়ার্ক বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।