সীমান্ত সুরক্ষায় কোনও খামতি থাকবে না: জেনারেল বিপিন রাওয়াত
দেশের সেনাবাহিনীর উপর আস্থাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, "আমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত যে ভারতীয় সেনা দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে কোনও খামতি রাখবে না।"
কলকাতা: দেশের সীমান্ত রক্ষায় কোনও খামতি রাখবে না ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী (Indian armed force), তা সে স্থলভাগেই হোক, কিংবা বায়ু বা সমুদ্রে, এমনটাই জানালেন প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত (Bipin Rawat)।
সোমবার কলকাতায় গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স-এ “১৭-এ ফ্রিগেট যুদ্ধজাহাজ”-র (17-A Frigate Warship) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। সেখান থেকেই তিনি চিনকে আক্রমণ করে বলেন,”কোভিড প্যানডেমিকের মাঝেই চিন যেভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে, তাতে স্থল, বায়ু ও জলভাগে উচ্চপর্যায়ে নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।”
দেশের সেনাবাহিনীর উপর আস্থাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত যে ভারতীয় সেনা দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে কোনও খামতি রাখবে না।”
China’s attempt to change the status quo on Line of Actual Control along the northern border amidst #COVID19 pandemic necessities high-level preparation on land, sea & air: Chief of Defence Staff General Bipin Rawat in Kolkata pic.twitter.com/q4oPOfgDkE
— ANI (@ANI) December 14, 2020
আরও পড়ুন: রাজস্থান পুরভোটে বড় জয় কংগ্রেসের, নির্দলের থেকেও পিছিয়ে বিজেপি
সরকারী নীতির প্রশংসায় তিনি বলেন,”সরকার নিজস্ব নীতির মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ (Make in India)-র প্রচার চালিয়েছে। আত্মনির্ভর ভারত (Atmanirbhar Bharat)-র মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও বৃহত্তর বিনিয়োগ আনার স্বপ্ন পূরণে ভারতীয় সংস্থাগুলি দেশের অভ্যন্তরেই কর্মসংস্থান করেছে।”
এর আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও (S Jaishankar) পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Actual Control) নিয়ে বিগত সাতমাস ধরে ভারত ও চিনের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তা নিয়ে বলেন,”ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সঠিক সময়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।”
চিন নিয়ে যে তিনি কোনওরকম নরম হতে নারাজ, সেই বিষয়টি এদিন বক্তব্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। “চিনের সঙ্গে আমরা সব ক্ষেত্রে টক্কর দিচ্ছি। লাদাখে সর্বদা সতর্ক রয়েছি আমরা। তিব্বত স্বশাসিত এলাকায় চিনের বেশ কিছু কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি দেশই নিজের দেশের কড়া নিরাপত্তার জন্য কৌশল বদল করে থাকে। আমরাও সেরকম প্রয়োজনমতো নিজেদের কৌশল ঠিক করে নিয়েছি। লক্ষ্য রাখছি পড়শি দেশের কর্মকাণ্ডের উপরও।” এমনটাই জানান বিপিন রাওয়াত।
এদিন গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সের তৈরি দেশের সবথেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ স্টেলথ ফ্রিগেট জলে নামানো হয়। অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াত ছাড়াও পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৌহান, পূর্বাঞ্চলীয় নৌ – কমান্ডের ফ্ল্যাগ অফিসার ইন কমান্ডিং ইন চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল অতুল চৌহান সহ তিন বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করেন গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল আর কে সাক্সেনা।
আধুনিক এবং শক্তিশালী মিসাইল ব্রহ্মস ও বারাক বহনকারী এই ‘ফ্রিগেট’ নৌবাহিনীকে আরও ক্ষমতাশালী করে তুলবে। ১৭-এ গোত্রের এই ফ্রিগেট মোট সাতটি তৈরি হচ্ছে। যার মধ্যে তিনটি গার্ডেনরিচ এবং চারটি মুম্বাইয়ের মাজাগাওঁতে রয়েছে। ইতিমধ্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি ফ্রিগেট নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন, “ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের ১২০-টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে”। গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তজার্তিক জলপথে এতগুলি রণতরী অবস্থানের অন্যতম কারণ নৌবাণিজ্যের সুরক্ষা। এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশই আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের জন্য উন্নত নৌ যোগাযোগ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সক্রিয়। সেই উদ্দেশ্যেই এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে ওই বাড়তি শক্তি সন্নিবেশ করেছে আঞ্চলিক শক্তিগুলি। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে নিজস্ব প্রযুক্তিতে আরও বেশি করে যুদ্ধজাহাজ তৈরির কথা বলেন প্রতিরক্ষা প্রধান। একইসঙ্গে সমর সজ্জায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি আধুনিক অস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান তৈরির কথাও উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, লাদাখে টানা ১৫ দিন যুদ্ধ চালাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গোলাবারুদ, বুলেট, গ্রেনেড, ল্যান্ডমাইন ও অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল-সহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুত করছে ভারতীয় সেনা। বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ পূর্ব লাদাখের ভারতীয় সেনার ফরওয়ার্ড পোস্টগুলির খুব কাছে গোপন অস্ত্রভাণ্ডারে মজুত করা হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে। চিনের বিরুদ্ধে যে কোনও সময় বড় সংঘাত হতে পারে ধরে নিয়েই এই অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে বলে দাবি সেনার একাংশের। যদিও সেই প্রসঙ্গে বিপিন রাওয়াত দাবি করেন, এটা ১৫ দিনের জন্য মজুত করা হচ্ছে, ঠিক কথা নয়। কারণ যুদ্ধ লাগলে তা কতদিন চলবে, কেউ জানে না। তাই মজুত সর্বদাই রাখা হয়। সেগুলি কোনও নির্দিষ্ট দিনের জন্য নয়।
আরও পড়ুন: “কৃষকরা বিষ খেয়ে অসুবিধা নেই, পিৎজা খেলেই খবর!”, সমালোচকদের কড়া জবাব দিলজিতের