লখনউ: এক বেডরুমের ছোট্ট বাড়ি। সেখানে একই সঙ্গে থাকতেন স্বামী-স্ত্রী, তাঁদের শিশুকন্যা এবং স্ত্রীয়ের প্রেমিক। হ্যাঁ, শুনতে যতই অবিশ্বাস্য লাগুক, স্ত্রী-কন্যাকে কাছে রাখতে এই অদ্ভুত ব্যবস্থাতেই রাজি হয়েছিলেন বছর ২৬-এর শিবম গুপ্ত। এই ‘ত্রিপাক্ষিক লিভ-ইন সম্পর্কে’র অস্বাভাকতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তিনজনকেই। সম্পর্কের জটিলতা থেকে প্রায়শই তিনজনের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। বিপর্যয় ঘটতই, ঘটেছেও। শিবম গুপ্তকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্ত্রী ২৩ বছরের প্রিয়ঙ্কা গুপ্ত এবং প্রিয়ঙ্কার প্রেমিক গর্জন যাদবের বিরুদ্ধে। শিবমকে হত্যার দায়ে, তাদের দুজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে, ২১ ডিসেম্বর, উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল গাজিয়াবাদের বেহরমপুর গ্রামে। বিয়ের পর এই গ্রামেই থাকতেন শিবম এবং প্রিয়াঙ্কা। বাইক ট্যাক্সি চালক হিসেবে কাজ করতেন শিবম। তাঁদের বাড়ির পাশেই থাকত দিনমজুর, গর্জন যাদব (২৩)। শিবমের অনুপস্থিতিতে গর্জনের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল প্রিয়ঙ্কার। শিবম তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে গর্জনের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল প্রিয়ঙ্কা। বালিয়ায় এক বাড়িতে একসঙ্গে থাকা শুরু করেছিল তারা। প্রিয়ঙ্কা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল তার দুই বছরের মেয়েকেও। প্রায় মাস খানেক পর, তাদের খোঁজ পেয়ে বালিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন শিবম। প্রিয়ঙ্কাকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু, প্রিয়ঙ্কা শর্ত দেন, গর্জনকেও তাঁদের সঙ্গে থাকতে দিতে হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রী ও কন্যার প্রতি ভালোবাসার কারণে, স্ত্রীয়ের এই অদ্ভুত শর্তেই রাজি হয়েছিলেন শিবম। সেই থেকে গাজিয়াবাদে, একটি এক বেডরুমের বাড়িতে একসঙ্গে থাকতেন শিবম, প্রিয়ঙ্কা, তাঁদের মেয়ে এবং গর্জন। কিন্তু পরিস্থিতির জটিলতার কারণে, তিন জনের মধ্যে ঝগড়া-অশান্তি লেগেই থাকত। এই তর্কাতর্কিতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল প্রিয়ঙ্কা। ২১ ডিসেম্বর রাতে শিবম ঘুমিয়ে পড়ার পর, প্রিয়ঙ্কা তাঁর গলা টিপে ধরেছিল। আর, একটি ছুরি দিয়ে গর্জন তাঁকে একাধিকবার আঘাত করে। এই জোড়া আক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল শিবমের। এরপর প্রিয়ঙ্কা এবং গর্জন, শিবমের লাশ একটি কম্বলে মুড়ে কাছের এক ফাঁকা জমিতে ফেলে এসেছিল। মুছে ফেলেছিল বাড়িতে থাকা যাবতীয় রক্তের দাগ। তবে, এই দাগই শেষ পর্যন্ত তাদের ধরিয়ে দিয়েছে।
শিবমের লাশটি দেখে এক পথচারী খবর দিয়েছিলেন পুলিশে। দেহটি পাওয়ার পর, স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ জেরা করেছিল প্রিয়ঙ্কাকে। প্রিয়ঙ্কা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, শিবম রাতে কাজে গিয়েছে, আর ফেরেনি। গর্জনকে সে এক আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছিল। এদিকে, বাড়ির সিঁড়িতে রক্তের দাগ পেয়েছিল পুলিশ। তারা বুঝতে পেরেছিল, ওই বাড়িরই কেউ শিবমকে হত্যা করেছে। কিন্তু, বাড়িটিতে অন্তত ১০টি পরিবার থাকে। তাই কোনও একজনকে দোষী হিসেবে শনাতক্ত করা কঠিন ছিল। তাই, পুলিশ একটি বেনজিডিন পরীক্ষা করে। এই পরীক্ষায় রক্ত মুছে ফেললেও, কোথায় কোথায় তার দাগ ছিল তা ধরা যায়। সোমবার এই পরীক্ষা করে পুলিশ বুঝতে পারে, শিবম-প্রিয়ঙ্কাদের বাড়িতেই রক্তের দাগ ছিল। এরপরই প্রিয়াঙ্কা ও গর্জনকে আটক করে পুলিশ। টানা জেরার মুখে, প্রিয়ঙ্কা সব কথা স্বীকার করে। পরে, যে ছুরিটি দিয়ে শিবমকে আঘাত করেছিল গর্জন, সেই ছুরিটিও চালের পাত্র থেকে পেয়েছে পুলিশ। বুধবার তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে তারা।