আহমেদাবাদ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি সম্পর্কিত তথ্য পাবেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। ২০১৬ সালে এই বিষয়ে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে আদেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন বা সিআইসি (CIC)। সিআইসির রায়কে গুজরাট হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার (৩১ মার্চ), সেই আবেদন মেনে নিয়ে, সিআইসির রায়টি খারিজ করে দিল আদালত। বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণব জানিয়েছেন, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনও নোটিস না দিয়েই ওই রায় দিয়েছিল সিআইসি। সিআইসির রায় খারিজ করার পাশাপাশি, আদালত এদিন জানিয়েছে, এই মামলার খরচ বাবদ অরবিন্দ কেজরীবালকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে গুজরাট রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে ২৫,০০০ টাকা জমা দিতে হবে।
এই মামলার সূচনা হয়েছিল, অরবিন্দ কেজরীবালের সচিত্র নির্বাচনী পরিচয়পত্র সংক্রান্ত একটি আবেদন থেকে। ওই আবেদনটির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে মামলা চলাকালীন মূলত, কমিশনকে চিঠি লিখে কেজরীবাল দাবি করেছিলেন কমিশনের কর্মকাণ্ড স্বচ্ছ নয়। তিনি আরও বলেছিলেন, যে তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে তৈরি। তবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যাতে কোনও বিভ্রান্তি না থাকে, তার জন্য তাঁর ডিগ্রির বিবরণও প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হোক। এরপরই, তৎকালীন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার ড. শ্রীধর আচার্যুলু, কেজরীবালের ওই চিঠিকে একজন নাগরিক হিসাবে আরটিআই-এর অধীনে আবেদন হিসাবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেন। নরেন্দ্র মোদী কবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেছেন, তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কেবলা হয়েছিল, কেজরীবালের হাতে মোদীর ডিগ্রির তথ্য তুলে দেওযার জন্য। এই রায়ের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে গিয়েছিল গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়।
গত মাসে হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি দাবি করেছিলেন, যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তা সকলেই জানেন। সিআইসি-র রায়ের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে কোনও পদস্থ ব্যক্তি ডক্টরেট না নিরক্ষর, তাতে কোনও পার্থক্য হয় না। এছাড়া, এই ইস্যুতে কোনও জনস্বার্থ জড়িত নেই। বরং এতে তাঁর গোপনীয়তা নষ্ট হবে।” তুষার মেহতা আরও জানান, যে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তার সঙ্গে পাবলিক ফিগার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, “কারও শিশুসুলভ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কৌতূহল মেটানোর জন্য আমাদের তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া যায় না।” তাছাড়া, আরটিআই আইনের আওতায় চাওয়া তথ্য অবশ্যই জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রাতরাশে কী খেলাম, তা জিজ্ঞেস করা যায় না। কিন্তু, প্রাতরাশ খেতে গিয়ে কত টাকা খরচ করলাম, তা জিজ্ঞেস করা যায়।”
তুষার মেহতার বক্তব্যের বিরোধিতা করে, অরবিন্দ কেজরীবালের পক্ষের আইনজীবী পার্সি কাভিনা দাবি করেন, তাঁদের কৌতূহল মোটেই শিশুসুলভ নয়, বরং দায়িত্বশীল কৌতুহল। কারণ, নির্বাচনের মনোনয়নের ফর্মে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতে হয়। আর নরেন্দ্র মোদীর মার্কশিট নয় তাঁর ডিগ্রি সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। সেই সার্টিফিকেট ইন্টারনেটে বা প্রকাশ্য কোনও প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ নয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল, কিন্তু রায় ঘোষণা করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত এই রায় গেল গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই।