AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Gurgaon: তিন বছর ধরে গুরগাঁওয়ের বাড়িতে স্বেচ্ছাবন্দি মা ও শিশু, প্রবেশাধিকার ছিল না বাবারও

Gurgaon woman locked son, herself for 3 years: তিন বছর ধরে গুরগাঁওয়ের মারুতি কুঞ্জের বাড়িতে নিজেদের তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন মা ও শিশুপুত্র। বাড়িতে ঢুকতে পারেননি ইঞ্জিনিয়ার স্বামীও।

Gurgaon: তিন বছর ধরে গুরগাঁওয়ের বাড়িতে স্বেচ্ছাবন্দি মা ও শিশু, প্রবেশাধিকার ছিল না বাবারও
তিন বছর ধরে নিজেদের তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন মা এবং তাঁর ১০ বছরের পুত্র, ঢুকতে পারেননি বাবা
| Edited By: | Updated on: Feb 22, 2023 | 7:38 PM
Share

গুরগাঁও: তিন বছর ধরে গুরগাঁওয়ের মারুতি কুঞ্জের বাড়িতে নিজেদের তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন মুনমুন মাঝি এবং তাঁর ১০ বছরের পুত্র। ২০২০ সালে ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। প্রথম লকডাউনের পরে যখন বিধিনিষেধগুলি আংশিকভাবে শিথিল করা হয়েছিল, সেই সময় অফিস যাওয়ার জন্য একবার বাড়ির বাইরে পা রেখেছিলেন তাঁর ইঞ্জিনিয়ার স্বামী সুজন মাঝি। তারপর থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি সুজন, বা বলা ভাল ঢুকতে দেননি মুনমুন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সকলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শেষে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মা-ছেলেকে বন্দিদশা থেকে বের করে এনেছে গুরগাঁও পুলিশের একটি দল। স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং শিশু কল্যাণ দফতরের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ির প্রধান দরজা ভেঙে তাঁদের দু’জনকে বের করে আনে পুলিশ। আর তাতেই জানা গিয়েছে কোভিড আতঙ্কের এক অদ্ভুত কাহিনি।

কোভিড মহামারির প্রথম দিনগুলিতে বহু মানুষই সংক্রমণের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। অনেকেই নিজেদের বাড়ির ভিতরে বন্দি করে নিয়েছিলেন। বাইরে থেকে খবরের কাগজ বা অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পর্যন্ত ঢুকতে দেননি। তবে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। লড়াই করার জন্য হাতে এসেছে ভ্যাকসিন। তুলে নেওয়া হয়েছে লকডাউন এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ। কিন্তু, মুনমুনের মতো ধনুর্ভাঙা পণ গ্রহণ করতে কাউকে দেখা যায়নি। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, যতদিন না পর্যন্ত শিশুদের জন্য কোভিড-১৯-এর টিকা বের হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তিনি ও তাঁর ছেলে বাড়ির বাইরে পা রাখবেন না। উল্লেখ্য, তাঁর ছেলের বয়স এখন ১০ বছর। আর এখনও পর্যন্ত ভারতে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কোভিডের কোনও টিকা চালু হয়নি।

পারলে স্বামী সুজনকেও বাড়ির মধ্যেই আটকে রাখতেন মুনমুন। কিন্তু, বেসরকারি অফিস, চাকরি টিকিয়ে রাখতে লকডাউনের পর বাড়ির বাইরে পা রাখতেই হয়েছিল তাঁকে। আর তারপর থেকে নিজের বাড়িতেই প্রবেশাধিকার হারিয়েছিলেন সুজন। প্রথমে তিনি বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু, তিন বছর ধরে তো অন্যের বাড়িতে থাকা যায় না। তাই পরে, একই এলাকায় নিজের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে একমাত্র উপায় ছিল ভিডিয়ো কল। মুনমুনকে বারবার বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি। মুনুমুনের বাবা-মাকে দিয়েও তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন সুজন। তাতেও কোনও লাভ হয়নি।

উদ্ধারের পর ১০ বছরের শিশুপুত্র এবং মুনমুন

নিজের বাড়িতে নিজেই ঢুকতে না পারলেও, অন্য কেউ তাদের বাড়িতে হাজির হয়ে মুনমুনের আতঙ্ক যাতে আর না বাড়িয়ে দেয়, তা নিশ্চিত করতে সবরকম ব্যবস্থআ নিয়েছিলেন সুজন। মাসের বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুতের বিল, ছেলের স্কুলের বেতন মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি মুদি এবং সবজি বাজার করে বাড়ির প্রধান দরজার বাইরে রেখে যেতেন। অধিকাংশ আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও, মুনমুন তাঁর ছেলেকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিয়েছিল। কারণ, তার অনলাইন ক্লাস ছিল। তবে, রান্নার গ্যাস ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কারণ সিলিন্ডার বদলাতে বাড়িতে অন্য লোক আসবে। পরিবর্তে একটি ইন্ডাকশন হিটার ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। কোনওভাবেই মুনমুনকে বোঝাতে না পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুজন। তবে, পুলিশ প্রথমে তাঁর কথায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।

চক্করপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর প্রবীন কুমার জানিয়েছেন, পারিবারিক বিষয় বলে প্রথমে তিনি মামলাটিকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু, পরে সুজনের সমস্যা সে উপলব্ধি করেছিল। সুজন তাঁকে মুনমুন এবং তাঁদের ছেলের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথাও বলিয়ে দেন। সেই কলে সুজন-মুনমুনের ছেলে জানায় তিন বছর ধরে বাড়ির বাইরে না বেরোতে পেরে তার মন খারাপ। এরপরই স্বাস্থ্য বিভাগ এবং শিশু কল্যাণ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। কিন্তু, প্রথম অভিযানে তাদের বাধা পেতে হয়। মুনমুন তাঁর ছেলেকে হত্যা করে নিজে আত্মঘাতী হওয়ার হুমকি দেন। মঙ্গলবার সকালে দলটি ফিরে এসে মুনমুনকে ফের বোঝানোর করার চেষ্টা করে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা দরজা ভেঙে মা-ছেলেকে উদ্ধার করে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দুজনকে সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ-সহ একটি মেডিকেল টিম তাদের দেখছে। তিন বছর পর স্ত্রী-ছেলেকে স্পর্শ করতে পেয়ে অভিভূত সুজন হয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেছেন, “আমি খুশি যে ওরা বেরিয়ে এসেছে। এবার আমাকে ওদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।”