এখনও মাস্ক পরেন না ৫০ শতাংশ মানুষ, সচেতনতাকে গোল্লায় পাঠিয়ে অন্যকেও বিপদে ফেলছেন আপনি!

এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের (West Bengal Doctor's Forum) যুগ্ম সম্পাদক চিকিৎসক রাজীব পাণ্ডের মত, মাস্ক পরা নিয়ে কঠোর হোক প্রশাসন। প্রয়োজনে জরিমানার ব্যবস্থা চালু হোক।

এখনও মাস্ক পরেন না ৫০ শতাংশ মানুষ, সচেতনতাকে গোল্লায় পাঠিয়ে অন্যকেও বিপদে ফেলছেন আপনি!
ছবি পিটিআই।
Follow Us:
| Updated on: May 21, 2021 | 3:40 PM

কলকাতা: করোনা-সুনামিতে (COVID-19) নাকানিচোবানি খাচ্ছে দেশ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার যেমন বেশি, তেমনই সংক্রমণের বলিও প্রচুর। অথচ এখনও সতর্কতা নেই মানুষের মধ্যে। দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এখনও মাস্ক পরছেন না। ৬৪ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরলেও নাক উন্মুক্ত। অর্থাৎ করোনার প্রবেশদ্বার খুলেই রাখছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক সমীক্ষায় সম্প্রতি উঠে এসেছে এমনই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চিত্র।

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বৃহস্পতিবারই জানান, দেশের আটটি রাজ্যে ১ লক্ষের বেশি অ্যাকটিভ কেস রয়েছে। ৯টি রাজ্যে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ অ্যাকটিভ কেস রয়েছে। ১৯টি রাজ্যে ৫০ হাজারের কম অ্যাকটিভ কেস।

ফেব্রুয়ারির পর থেকেই এ দেশের করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক সপ্তাহে পরীক্ষাও বেড়েছে। পজিটিভ রোগীর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এরইমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ দেশে ৫০ শতাংশ মানুষ এখনও মাস্ক পরেন না।

যে ৫০ শতাংশ মাস্ক পরেন, তাদেরও গাফিলতির অন্ত নেই। যেমন এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ মাস্কে নাকের নিচের অংশ অবধি ঢেকে রাখেন। নাক খোলা। এ ভাবে মাস্ক পরা আর না পরা প্রায় সমার্থক। আবার ২০ শতাংশের মাস্ক ঝুলে থাকে থুতনিতে। করোনার বেলাগাম সংক্রমণও ডরাতে পারেনি এই সব মানুষকে। মাত্র ১৪ শতাংশ সচেতন নাগরিক এই দেশে। তাঁরাই ঠিকমত মাস্ক পরেন। যথাযথ ভাবে নাক, মুখ, থুতনি ঢেকে বাড়ির বাইরে বের হন।

এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক চিকিৎসক রাজীব পাণ্ডের মত, মাস্ক পরা নিয়ে কঠোর হোক প্রশাসন। প্রয়োজনে জরিমানার ব্যবস্থা চালু হোক। মাস্ক না পরলেই টাকা নেওয়া হোক জরিমানা হিসাবে। রাজীববাবু বলেন, “পেনাল্টির ব্যবস্থা না করলে আমাদের দেশে কিচ্ছু হবে না। আমরা অনেকদিন ধরেই বলছি, মাস্ক না পরলে জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হোক।” তবে এই মাস্ক পরা নিয়ে একদলের আবার প্রশ্ন আছে, ‘মাস্ক পরলেও তো করোনা হচ্ছে’।

আরও পড়ুন: মানবতাই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, মৃত্যু পথযাত্রী মুসলিম কোভিড রোগীর কানে কলমা পড়ে শোনালেন হিন্দু চিকিৎসক

এ প্রসঙ্গে রাজীব পাণ্ডে বলেন, এ যুক্তির কোনও অর্থ নেই। কারণ যে সমস্ত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম সারিতে থেকে করোনার সঙ্গে লড়ছেন, তাঁদের সকলেই মাস্ক-সহ যথাযথ সতর্কতা নেন। তাঁদের মধ্যেও অনেকেই কোভিড আক্রান্ত হন। কিন্তু সকলে তো হন না! অর্থাৎ মাস্কের ভূমিকা এ ভাবে কেউ লঘু করে দিতে চাইলেই সেটা যে গৃহীত হবে তেমন নয়।

চিকিৎসকরা বারবার বলছেন, টিকা নিলেও মাস্ক কিন্তু মাস্ট। তবু সেসবে ভ্রূক্ষেপ নেই বহু মানুষের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সৌগত ঘোষ এর কারণ হিসাবে শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন।

সৌগত ঘোষের কথায়, “খেয়াল করলে দেখা যাবে শিক্ষাগত দিক থেকে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে এমন মানুষের মাস্ক নিয়ে উদাসীনতা রয়েছে। অন্যদিকে ছাত্র যুব সমাজের মধ্যেও কিছুটা এই প্রবণতা আছে। মূল কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব। এরা ভাবছেন, আমরা যেহেতু কায়িক পরিশ্রম করি, আমরা সংক্রমিত হব না। আবার ছাত্র-যুবদের মধ্যে একটা ধারনা আছে, আমাদের বয়স কম সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাও তাই কম।” কিন্তু এসব ধারণা যে একেবারে ভ্রান্ত!

মাস্ক কেন মাস্ট, কী বলছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ

সৌগত ঘোষের কথায়, “যেহেতু এটা বায়ুবাহিত ভাইরাস, তাই তা প্রতিরোধে প্রাথমিক শর্ত হল, ভাল মানের মাস্ক পরা। কারণ, আমরা বারবার বলছি, আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHOও এটাকে এয়ারবোর্ন বলছে। ১০ মিটার পর্যন্ত দূরত্বে তা ছড়ায়। ৩৩ ফুট পর্যন্ত বাহিত হয়ে এই ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে। করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকেই আমরা বলে আসছি মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। এখনও বলব এই দু’টিই কিন্তু অন্যতম হাতিয়ার। আরও সচেতন হওয়া দরকার আমাদের।”