লখনউ: মঙ্গলবার (২ জুলাই) উত্তর প্রদেশের হাথরসের এক গ্রামে আয়োজিত এক ধর্মসভায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১৬ জনের মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিন হাথরসের ফুলরাই গ্রামে, এক সৎসঙ্গ বা ধর্মসভার আয়োজন করেছিলেন ‘নারায়ণ সাকার হরি’ ওরফে ‘সাকার বিশ্ব হরি’ ওরফে ‘ভোলেবাবা’ নামে এক স্থানীয় ধর্মগুরু। শোনা যাচ্ছে, এদিন তাঁর ধর্মসভায় প্রায় ৫০,০০০ মানুষের ভিড় হয়েছিল। এক বিশেষ তাঁবুর মধ্যে চলছিল সভা। অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায়, তাঁবুর ভিতর আদ্রতা ও গরম ছিল অত্যন্ত বেশি। তার উপর তাঁবু থেকে বের হওয়ার ছিল একটিই দরজা। সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরই, বাবাজির চরণধূলী নিতে গিয়েই হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কে এই ‘নারায়ণ সাকার হরি’ ওরফে ‘সাকার বিশ্ব হরি’ ওরফে ‘ভোলেবাবা’?
রাম রহিম, সদগুরুদের মতো ভোলেবাবাও এক স্বঘোষিত ধর্মগুরু। শোনা যায়, উত্তর প্রদেশের ইটা জেলার বাহাদুর নাগরি গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর কলেজের পরা শেষ করে তিনি নাকি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি-তে কাজ করা শুরু করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। সেই কাজ করতে করতেই তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে আইবি-র কাজ ছেড়ে তিনি পুরোপুরি আধ্যাত্মিক পথে চলে আসেন। তিনি নিজেকে ভগবান হরির শিষ্য বলে দাবি করেন। সরাসরি সর্বশক্তিমান ইশ্বরের সঙ্গে যোগ রয়েছে তাঁর বলে দাবি করেন তিনি।
সমযের সঙ্গে সঙ্গে বাবাজির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আজ উত্তর ভারত জুড়ে তাঁর হাজার হাজার অনুগামী আছে। তবে, প্রধাণত তারা ছড়িয়ে রয়েছে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লিতে। তিনি সাধারণত উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে, প্রতি মঙ্গলবার সৎসঙ্গ আয়োজন করেন। শয়ে শয়ে ভক্তরা এই সৎসঙ্গগুলিতে সমবেত হয়। এই ধরনের জমায়েতে, তাঁর স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার ও পানীয়-সহ ভক্তদের সমস্ত প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করে। তাঁর অনুগামীরা বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ, গরীব মানুষ। তবে অনেক সাংসদ বিধায়কও তাঁর ধর্মসভায় আসেন বলে শোনা যায়।
বাবাজির এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল, তাঁকে অন্যান্য বাবাদের মতো গেরুয়া পোশাকে দেখা যায় না। তার বদলে তাঁকে সাধারণত সাদা স্যুট এবং টাই পরতে দেখা যায়। কখনও কখনও সাদ কুর্তা-পাজামাও পরেন। । প্রায়শই ধর্মোপদেশ দেওয়ার সময় বাবাজির সঙ্গে তাঁর স্ত্রীকেও দেখা যায়। আর বাবাজির সঙ্গে যে চ্যালারা ঘোরাফেরা করে, তারা পরে থাকে গোলাপী শার্ট, প্যান্ট ও সাদা টুপি। কারা সৎসঙ্গে আসবে, কারা ভিতরে ঢুকবে তারাই ঠিক করেমণ্ডলীতে যাতায়াত ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে দেখা যায়। সাংবাদিকদের সৎসঙ্গে প্রবেশাধিকার নেই। বাবাজি সম্পর্কে কোনও ব্যক্তিগত বিবরণ জানার উপায় নেই।
এর আগে, কোভিড মহামারির সময়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন এই ভোলেবাবা। কোভিড-১৯-এর বিধিনিষেধ উডিয়ে একের পর এক বড় মাপের ধর্মসভা আয়োজন করছিলেন তিনি। বাবার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও তিনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁর কোনও অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নেই।