গত এক বছরে বিচার ব্যবস্থায় একাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নতুন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তবে তিনি দায়িত্ব পাওয়ার আগে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সময় খুলে দেওয়া হল ‘আইনের চোখ’। বদল এল ‘লেডি জাস্টিস’-এর মূর্তিতে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ জুড়ে একের পর এক উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত, যার সুদূর প্রসারী প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়।
ছাড়া পেল না বিলকিস বানোর ধর্ষকরা
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিলকিস বানোর ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের ছেড়ে দিতে চেয়েছিল গুজরাট সরকার। বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের বেঞ্চ সেই নির্দেশ খারিজ করে দেয়। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানায়, এক্তিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুজরাট সরকার।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাটে অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। হত্যা করা হয় তাঁর একাধিক আত্মীয়কে।
ইলেকটোরাল বন্ড বাতিল
২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট ‘ইলেকটোরাল বন্ড’ বাতিল করার নির্দেশ দেয়। দুর্নীতি বন্ধ করতে এই ‘ইলেকটোরাল বন্ড’-এর ঘোষণা করেছি মোদী সরকার। ওই প্রক্রিয়ায় কে অনুদান দিচ্ছেন, সেটা না জানিয়েও রাজনৈতিক দলগুলিকে বন্ড কিনে দেওয়া যেত। যিনি বন্ড কিনে দিচ্ছেন, সেই ব্যক্তি বা সংস্থার নাম গোপন থাকত।
সেই বন্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের সাংবিধানিক বেঞ্চ ‘ইলেকটোরাল বন্ড’-কে অবৈধ বলে উল্লেখ করে।
ব্যক্তিগত সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারে না সরকার
২০২৪-এর নভেম্বরে এক ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানায়, সব ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরকার ব্যবহার করতে পারে না। সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যও সব সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে না। ওই মামলায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ছাড়া ৯ বিচারপতির বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি বি ভি নাগারত্ন, বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া, বিচারপতি হৃষিকেশ রায়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্র, বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি এসসি শর্মা ও বিচারপতি এজি মাসিহ।
সংবিধানের ৩৯বি অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বুঝিয়ে দেয় সব ব্যক্তিগত সম্পত্তি সর্বসাধারণের প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার করা যায় না, কিছু কিছু ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করবে সম্পত্ত অধিগ্রহণ করা যাবে কি না।
সংরক্ষণের মধ্যে সংরক্ষণ
২০২৪-এর অগস্ট মাসে সংরক্ষণ নিয়ে উল্লেখযোগ্য রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই তফসিলি জাতি-জনজাতিদের (এসসি-এসটি) মধ্যে একাংশকে চিহ্নিত করে আলাদা করে সংরক্ষণের কথা বলে শীর্ষ আদালত। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়।
বন্ধ বুলডোজার
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যে রায়গুলি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, তার মধ্যে অন্যতম ‘বুলডোজ়ার’ রায়। কারও বাড়ি বুলডোজ়ারে গুঁড়িয়ে দিতে পারে না প্রশাসন। রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়, প্রশাসন কখনও আইন হাতে তুলে নিতে পারে না।
বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বাসস্থানের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। এমনকী কেউ অপরাধ করলেও তাঁর বাড়ি ভেঙে দেওয়া অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত।