
নয়া দিল্লি: বিরোধীদের হট্টগোলের মাঝেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন ওয়াকফ বিল আসলে মুসলিমদের ভালর জন্য়ই। ওয়াকফের জমি চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করে অমিত শাহ বলেন, মুসলিমদের দান করা সেই জমি যাতে সঠিক কাজে ব্যবহার হয়, জমির টাকা যাতে গরিব মুসলিমদের কাজে লাগে, তার জন্যই এই বিল আনা হয়েছে।
বিলে যে অমুসলিম সদস্যের কথা বলা হয়েছে, শুরুতেই সেই প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন “একজন মুসলিম তো চ্যারিটি কমিশনার হতেই পারেন। তাঁকে ট্রাস্ট দেখতে হবে না, আইন অনুযায়ী ট্রাস্ট কীভাবে চলবে, সেটা দেখতে হবে। এটা ধর্মের কাজ নয়। এটা প্রশাসনিক কাজ। সব ট্রাস্টের জন্য কি আলাদা আলাদা কমিশনার থাকবে? আপনারা তো দেশ ভাগ করে দিচ্ছেন। আমি মুসলিম ভাই-বোনদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের ওয়াকফ বোর্ডে কোনও অমুসলিম থাকবে না। এই আইনে এমন কিছু নেই।”
ব্যাখ্যা করে অমিত শাহ বলেন, “ওয়াকফ পরিষদের কাজ কী হবে জানেন? ওয়াকফের জমি যারা বেচে দিচ্ছে, তাদের ধরে বের করে দেওয়া। ওয়াকফের নামে যারা বছরের পর বছর জমি ভাড়ায় খাটাচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।” শাহের বক্তব্য, “ওয়াকফের টাকা, যা দিয়ে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন করা দরকার, সেই টাকা যারা চুরি করছে, তাদের ধরার কাজ করবে ওয়াকফ পরিষদ।”
একই সঙ্গে কংগ্রেসের দিকেও এদিন আঙুল তোলেন তিনি। মনমোহন সিং সরকারের আমলে যে ওয়াকফ সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল, সেই কথা উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেন, “২০১৩-তে যে সংশোধনী হয়েছিল, সেটা যদি না করা হত, তাহলে এই বিল আনতে হত না। সব ঠিকই চলছিল। ২০১৪-তে ভোট ছিল। তার আগে রাতারাতি তোষণের জন্য ওয়াকফ আইন চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”
অমিত শাহ এদিন তথ্য তুলে ধরে বলেন, “২০১৩-র পর ১২৩টি ভিভিআইপি সম্পত্তি কংগ্রেস সরকার ওয়াকফের নামে করে দিয়েছিল। দিল্লি ওয়াকফ বোর্ড রেলের জায়গা ওয়াকফকে দিয়ে দেয়, হিমাচলে মসজিদ তৈরি করে দেয়, তামিলনাড়ুর ১৫০০ বছরের পুরনো মন্দিরের ৪০০ একর জমি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করে দেয়।”
২০০১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকার ওয়াকফ সম্পত্তি লিজে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন শাহ। তিনি জানান, ৫০০ কোটির সম্পত্তিতে পাঁচতারা হোটেল তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে, যা থেকে মাসে মাসে ১২ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। শাহের বক্তব্য, “এই টাকা গরিব মুসলিমদের। এটা চুরির নয়। এটা বন্ধ করতে চাই।”
অনেক চার্চও ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিরোধীদের কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেন, “মুসলিমদের সমবেদনা নিয়ে যারা ভোটে জিততে চাইছে, তাদের বলতে চাই, কোনও লাভ নেই। চার বছরে মুসলিমরা বুঝে যাবে, যে এই বিল ওদের সুবিধার জন্যই। দক্ষিণের সাংসদরা জেনে রাখুন, চার্চগুলোও আপনাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে যাবে।”
ওয়াকফ নিয়ে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে অমিত শাহ বলেন, “স্পষ্ট করে দিচ্ছি, মুসলিমদের ধর্মকর্ম, তাদের যে দানের ট্রাস্ট, তাতে সরকার কোনও দখলদারি চায় না। ওয়াকফ আপনাদেরই থাকবে। কিন্তু ওয়াকফ আইন অনুযায়ী চলছে কি না, সেটাই দেখতে হবে। কারও দান করা জমিতে ১২০০০ টাকা ভাড়ায় পাঁচতারা হোটেল কেন করতে দেওয়া হবে? গরিব মুসলিম, অনাথ শিশু, তালাক প্রাপ্ত মহিলাদের জন্য দিন ওই টাকা খরচ করতে হবে।” শাহের বক্তব্য, মন্দির তৈরি করতে গেলে জমি দেখে কালেকটর, তাহলে ওয়াকফের জমি কালেকটর দেখলে অসুবিধা কোথায়!