ছবি সৌজন্যে : টিভি৯ বাংলা
নয়া দিল্লি : রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ থামার কোনও ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গতকাল বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই তরফের প্রতিনিধিই যুদ্ধবিরতি বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকের থেকে কোনও সমাধানসূত্র এখনও অবধি জানা যায়নি। গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। আজ তা ষষ্ঠ দিনে পড়ল। এর মধ্যে উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গেই ভারত তার উদ্ধারকার্যের গতি বাড়িয়েছে। আজ কেন্দ্রের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, কিয়েভে বসবাসকারী ভারতীয়রা যেন ট্রেন বা যেকোনও পরিবহনে করে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিয়েভ ছেড়ে যান। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বায়ুসেনাকে উদ্ধারকার্যে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। বায়ুসেনার C-17 যুদ্ধবিমানকে কিয়েভে থাকা দূতাবাসের আধিকারিকদের কিয়েভের স্টেশনে নিয়ে আসার কাজে লাগানোর জন্য বলা হয়েছে। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, ১৮,০০০ ভারতীয় ইউক্রেনে বসবাস করেন। এখনও অবধি প্রায় ২০০০ ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যুদ্ধের কালো ধোঁয়ায় আটকে রয়েছে এখনও অনেক ভারতীয় নাগরিক। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে রাত-দিন কাজ করছে কেন্দ্র সরকার। এই উদ্ধার অভিযানের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন গঙ্গা’।
অপারেশন গঙ্গার অধীনে ভারত সরকার কীভাবে সুরক্ষিত এবং নিরাপদভাবে ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনছে?
- কিয়েভে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকরা যাতে খুব তাড়াতাড়ি ট্রেন বা অন্য কোনও পরিবহনে করে কিয়েভ ছেড়ে যান। দূতাবাসের আধিকারিকরা স্টেশনে রয়েছেন যাতে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করতে কোনও ঝঞ্জাট না হয়। হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন মারফত জানা গিয়েছে, সূত্র জানিয়েছে, রবিবারই হাজারের বেশি ভারতীয় পড়ুয়াকে কিয়েভ থেকে ইউক্রেনের পশ্চিম প্রান্তে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকদের তরফে।
- রাশিয়ার হামলার কারণে ইউক্রেনে এয়ারস্পেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই অন্য রুটে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশগুলি দিয়ে ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পোল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের তরফে পড়ুয়াদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তাঁরা নিরাপদে সীমান্তে পৌঁছতে পারেন।
- ভারতীয় বায়ুসেনাকে উদ্ধারকার্যে যুদ্ধবিমান C-17 মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে। C-17 যুদ্ধবিমান একসঙ্গে ৩৩৬ জন যাত্রী বহন করতে পারে। এবং আফগানিস্তান তালিবানদের আক্রমণে আসার পর এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ করা হয়েছিল।
- চারজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এই উদ্ধারকার্যে সাহায্য় এবং তদারকি করার জন্য ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশে পাঠানো হচ্ছে। হাঙ্গারিতে উদ্ধারকার্যের ইনচার্জে রয়েছেন প্রাক্তন উড়ানমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। কেন্দ্রীয় অসামরিক উড়ানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া রোমানিয়া এবং মলডোভাতে উদ্ধারকার্যের তদারকি করবেন। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী কিরণ রিজিজু স্লোভেনিয়াতে সীমান্তে পারাপারকে দেখবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং পোল্যান্ডে উদ্ধার অভিযানের তদারকি করবেন।
- অপারেশন গঙ্গার অধীনে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে এখনও পর্যন্ত মোট নয়টি বিমান পাঠানো হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টুইটারে জানিয়েছেন, বুখারেস্ট থেকে নবম উড়ান দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেই বিমানে ২১৮ জন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন।
- বেসরকারি বিমান সংস্থা স্পাইসজেট নয়া দিল্লি থেকে স্লোভাকিয়াতে বিমান পাঠাবে সেখান আটকে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে। সংবাদ সংস্থা ANI সূত্রে, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজু স্বয়ং সেই বিমানে যাত্রা করবেন। তিনি সেখানে থেকে গোটা উদ্ধার অভিযানে নজর রাখবেন। বিমানটি দিল্লি থেকে সরাসরি কোসিসের উদ্দেশে রওনা দেবে এবং জর্জিয়ার কুতাইসিতে থেমে দেশে ফিরবে।
- বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, ইউক্রেনে প্রায় ১৮,০০০ জন ভারতীয় নাগরিক আটকে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৬,০০০ জনই পড়ুয়া। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০০ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হয়েছে গঙ্গা অপারেশনের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন : Russia-Ukraine Conflict : রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে প্রাণ হারালেন এক ভারতীয় পড়ুয়া