
নয়াদিল্লি: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাব দেওয়া হবেই। বৈসরনে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে জঙ্গিরা হত্যা করার পর হুঙ্কার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৫ দিনের মাথায় ভারতীয় সেনা জবাব দিয়েছিল। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। এবার আরও এক বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ ভারত সরকারের। অপারেশন সিঁদুর ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বের দরবারে ভারতের বক্তব্য তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে প্রতিনিধি দল। আর যেসব দেশে ভারত প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে, সেই দেশগুলিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক ভাবনা রয়েছে।
গত ৭ মে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে ভারতীয় সেনা। গুঁড়িয়ে দেয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। ভারতের সেই অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তান সেনা বিনা প্ররোচনায় সীমান্তে গোলাবর্ষণ করে। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারত জানায়, শুধুমাত্র জঙ্গিঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়েছে। পাকিস্তান সেনার কোনও পরিকাঠামোতে আঘাত হানা হয়। সেদেশের সাধারণ নাগরিকদেরও নিশানা করা হয়নি। তারপরও পাকিস্তান সেনা বিনা প্ররোচনায় ভারতীয় সীমান্তে গোলাবর্ষণ করে। ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করে। যোগ্য জবাব দেয় ভারত। অবশেষে গত ১০ মে পাকিস্তান সেনার ডিজিএমও ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেন। দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়।
তারপরই বিশ্বের কাছে অপারেশন সিঁদুর ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। পাকিস্তান কীভাবে সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে, তা-ও তুলে ধরতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি দল পাঠানো হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স নীতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
মোট সাতটি প্রতিনিধি দল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবে। প্রতিনিধি দলগুলিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির সদস্যরা রয়েছেন। মোট ৫১ জন রাজনৈতিক নেতা, যার মধ্যে বর্তমান সাংসদ ও প্রাক্তন মন্ত্রীও রয়েছে। ৮ জন প্রাক্তন অ্যাম্বাসাডরও রয়েছেন প্রতিনিধি দলগুলিতে। শশী থারুর, রবিশঙ্কর প্রসাদ, সঞ্জয় ঝা, কানিমোঝি, বৈজয়ন্ত পান্ডা, সুপ্রিয়া সুলে এবং শ্রীকান্ত একনাথ শিন্ডের মতো বর্ষীয়ান সাংসদরা প্রতিনিধি দলগুলিকে নেতৃত্ব দেবেন। সবচেয়ে তাৎপর্যের, প্রতিনিধি দলগুলিকে বিশ্বের এমন ২৫টি দেশে পাঠানো হচ্ছে, যা কূটনৈতিকভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সবমিলিয়ে ৩৩টি দেশে যাবে প্রতিনিধি দলগুলি।
২৫টি দেশের মধ্যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের (UNSC) সদস্য দেশ যেমন রয়েছে, তেমনই প্রভাবশালী দেশও রয়েছে। ২৫টি দেশের মধ্যে ১৫টি UNSC-র সদস্য। ৫টি দেশ আগামিতে UNSC-র সদস্য হবে। এবং ৫টি প্রভাবশালী দেশ। বিশ্বমঞ্চে যাদের বক্তব্য গুরুত্ব পায়।
কেন এই ২৫টি দেশকে বেছে নেওয়া হল?
আগামী ১৭ মাস UNSC-র সদস্য দেশ হিসেবে থাকবে পাকিস্তান। মিথ্যা প্রচারের জন্য UNSC-র মঞ্চকে ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান। অতীতেও ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নজির রয়েছে তাদের। তাই, আগেভাগে বিশ্বের দরবারের পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে চায় ভারত।
বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গি বলেন, “আগামী ১৭ মাস UNSC-র সদস্য থাকাকালীন বিভিন্ন বৈঠকে ভুল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবে পাকিস্তান। ভারত-বিরোধিতা করবে। তাই, ভারতের বক্তব্য তুলে ধরতে সরকার সঠিক পদক্ষেপ করেছে। পাকিস্তান যেভাবে সন্ত্রাসবাদকে তুলে ধরছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি।”