নয়া দিল্লি: ২০১৪ সালে দিল্লির মসনদে বসার পর থেকেই প্রশাসনিক হোক বা শিক্ষা, প্রতিক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Prime Minister Narendra Modi)। দেশজোড়া বিতর্কের মুখে দাঁড়িয়ে কখনও বদলছে সংবিধানের ধারা, আবার কখনও রদ হয়েছে আইন। এর মধ্যে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য দিল্লির ক্ষমতা দখলের পরেই একাধিক যুগান্তকারি সিদ্ধান্তের মধ্য়ে সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে মোদী সরকার। দেশের শিক্ষার খোলনলচে বদলাতে নয়া শিক্ষা নীতি (New Education Policy) নিয়ে আসে কেন্দ্র। ২৯ জুলাই, ২০২০। এ দিনটা ভারতীয় শিক্ষার আঙিনায় বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ দিনই মোদী সরকার ২.০-র হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করেছিল ভারতের নয়া শিক্ষানীতি। তাই মোদী সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তিতে (Modi govt’s 8th anniversary) এর প্রাসঙ্গিকতা অন্য মাত্রা এনে দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেও তো সেই সময়েও ঔপনিবেশিক ধারাকেই জিইয়ে রাখা হয়েছিল। যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল শিক্ষা মহলে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে সামান্য কিছু সংশোধন করা হয়েছিল। তবে তা বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। এদিকে এতদিন পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ছিল ১০+২ ভিত্তিতে। অর্থাৎ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্য়মিকের পর যাওয়া যেত কলেজে। সেই কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে নয়া শিক্ষানীতি ৫ + ৩ + ৩ + ৪ মডেলে। অর্থাৎ, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আরও তিন বছর যোগ করা হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে শিক্ষার দরজা খোলার কারণে মুখস্থ বিদ্যার জায়গায় প্রয়োগযোগ্য শিক্ষায় গুরুত্ব বেশি দেওয়া সম্ভব বলে মত কেন্দ্রের।
একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষাতে যে বড়সড় রদবদলের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মাল্টিপল এন্ট্রি অ্যান্ড এক্সিট সিস্টেম চালু করা। এ ক্ষেত্রে স্কুল ছুট, বা কলেজ ছুট পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটা কমবে বলে কেন্দ্রের দাবি। অর্থাৎ, শিক্ষাবর্ষের মাঝে কোনও পড়ুয়া কোনও কারণে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিলে পরে আবার সেখান থেকেই শুরু করতে পারবেন। বড় বদল এসেছে স্নাতকোত্তরেও। উঠে গিয়েছে এম ফিল। নয়া শিক্ষানীতির হাত ধরে ৩ বছর স্নাতক স্তরে এবং এক বছর স্নাতকোত্তর পড়ার পরে সরাসরি পিএইচডি করতে পারবেন।
সহজ ভাবে দেখলে, এই নয়া শিক্ষানীতিতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও স্কুলের কায়দাতেই মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এডুকেশন মোড চালু হচ্ছে। স্নাতক স্তর থেকেই চালু থাকছে মেজর ও মাইনর পদ্ধতি। যে কোনও পড়ুয়াই মূল বিষয়ের সহযোগী বিষয়গুলির পাশাপাশি সঙ্গীত, চিত্রকলার মতো বিষয়ও রাখতে পারবেন পাঠক্রমে। সহজ কথায় কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের সঙ্গে একইসাথে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের মতো বিষয় নিয়ে একই সঙ্গে পড়া যাবে।পাশাাপাশি নয়া শিক্ষানীতিতে গুণগত মানের নিরিখে প্রাপ্ত গ্রেডের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে আর্থিক স্বশাসনেরও নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। যদিও বড় অংশের শিক্ষাবিদদের মতে এই সকল চিন্তাধারার বাস্তবায়ন বিদেশে সম্ভব হলেও ভারতে তা বেসরকারিকরণের দরজাকেই আরও প্রশস্ত করবে। যদিও তা নিয়ে কেন্দ্রের অন্য যুক্তি রয়েছে। তাঁদের দাবি, বহুমুখী শিক্ষার ফলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাই পড়ুয়াদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে যাবে।