
শ্রীনগর: সীমান্তে পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। এবার নিরাপত্তা বাহিনীর টার্গেট দেশের অভ্যন্তরে। উপত্যকায় জঙ্গিদের সমূলে উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে অপারেশেন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি। কীভাবে চলছে এই অপারেশন? কোন কোন ফ্রন্টে শুরু হয়েছে অভিযান? সেই খুঁটিনাটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখল টিভি নাইন বাংলা।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, উত্তর কাশ্মীরে আস্তানা গেড়ে থাকা পাক জঙ্গিদের সংখ্যা অনেক বেশি। ইন্টেলিজেন্স উইং এর হিসাব অনুযায়ী, উত্তর কাশ্মীরে এখনও ৪৪ জন পাকিস্তানি জঙ্গি লুকিয়ে আছে। স্থানীয় জঙ্গির সংখ্যা ৬৬। দক্ষিণ কাশ্মীরে স্থানীয় জঙ্গি সংখ্যা ১০৯। পাক জঙ্গি সংখ্যা মাত্র ৭। আর এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পহেলগাঁওয়ের নারকীয় হত্যালীলা চালানো পিশাচরা। তাঁদের চিহ্নিত করে নিকেশ না করা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলবে সেনা অপারেশেন।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ইনপুটের ভিত্তিতে দক্ষিণ কাশ্মীরে নিকেশ করা হয়েছে কয়েকজন কুখ্যাত জঙ্গিকে। সূত্রের খবর, জঙ্গলের গভীরে এখনও চলছে অপারেশন। আর সেই গ্রাউন্ড জিরোতেই পৌঁছেছিল টিভি৯ বাংলা।
নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে জঙ্গিদের ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে না পারার পর থেকেই উপত্যকায় কাশ্মীরি যুবকদের জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগের উপর জোর দিয়েছে লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি।
এবারের লড়াইতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল গোয়েন্দা সূত্রে খবর বা ইন্টেলিজেন্স ইনপুট। তার কারণ জঙ্গি নিয়োগের ক্ষেত্রে উপত্যকায় সক্রিয় ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক (Active OGW Network)-এর জাল কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা বুঝতে না পারলে জঙ্গিদের গতিবিধি ট্রেস করা সম্ভব নয়। আর এই জালকে পরিমাপ করতে লোকাল ইনফর্মারদের চিরাচরিত পদ্ধতির উপরে নির্ভর করার পাশাপাশি প্রযুক্তির উপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন।
সেনা বাহিনী থেকে শুরু করে আধা সামরিক বাহিনী, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সহ সব এজেন্সির আলাদা ইন্টেলিজেন্স উইং তৈরি করেছে সরকার। যেমন মঙ্গলবার সোপিয়ানের “অপারেশেন কেলার”-এ জঙ্গিদের গভীর জঙ্গলে থাকার ইনপুট দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এর ইন্টেলিজেন্স উইং। এরপরই ড্রোনের মাধ্যমে জঙ্গলে মনিটরিং শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।
সূত্রের খবর, পাহাড়ে বা গভীর জঙ্গলে কোনও জঙ্গি ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে কি না, কোনও নির্মাণ হয়েছে কি না, তা জানতে প্রতি মুহূর্তে স্যাটেলাইট ইমেজের উপর নজর রাখছে ইন্টেলিজেন্স উইং।
গত কয়েক বছরে কিছুটা হলেও বদলেছে কাশ্মীরের প্রত্যন্ত এলাকার আর্থ-সামাজিক ছবিটা। বেড়েছে রোজগার। সরকারের এই পদক্ষেপের সুফল প্রতিমুহূর্তে কাজে লাগাতে মরিয়া নিরাপত্তা বাহিনীর ইন্টেলিজেন্স উইংও। এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি নিয়ে মুখ না খুললেও, এদের বক্তব্য এখন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এদের কথার উপর নির্ভর করেই সোপিয়ানে অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী।
এছাড়াও স্কুল, কলেজ পড়ুয়া বা যুব সম্প্রদায়ের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং গ্রুপের উপর লাগাতার নজরদারি রাখছে ইন্টেলিজেন্স উইং। নব্বইয়ের দশকে যেভাবে জঙ্গিরা কাজ করত, এখন তাদের কার্যপদ্ধতি (Modus Operandi) বদলে গিয়েছে সম্পূর্ণ । এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে শিক্ষিত ছাত্র এবং যুবকদের টার্গেট করে জঙ্গি সংগঠনগুলি। জেহাদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় চলে তাদের মগজ ধোলাই।
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সংগঠনে নতুন নিয়োগদের রোল মডেল হয়ে উঠেছিল বুরহান ওয়ানি। স্কুল ড্রপ আউট হলেও বুরহান ছিল দক্ষিণ কাশ্মীরের ত্রাল এলাকার অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। পুলওয়ামার নুরপুরের জাকির রশিদ ভাট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনো করতেন চণ্ডীগঢ়ে। বুরহান সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে অনুপ্রাণিত হয়েই হাতে অস্ত্র তুলে নেয় জাকির।
উপত্যকার মাটিতে দেশের জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা বরাবরই কম। বরং স্থানীয় ইউটিউব চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের উপর ভরসা অনেক বেশি। পহেলগাঁও এবং “অপারেশেন সিঁদুর” পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের বিষয়বস্তুর উপর নজর রাখছে ইন্টেলিজেন্স উইং।
নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারির দূরবীন এখন উপত্যকার বিরাট বিস্তৃত পাহাড়, জঙ্গল নদীর এলাকাজুড়ে। ইন্টেলিজেন্স ইনপুটের একাংশ বলছে, পীরপঞ্জলের আপার রেঞ্জে গিয়ে গা ঢাকা দিতে পারে বৈসরনের হামলাকারী জঙ্গিরা। তাঁদের নিকেশ না করা পর্যন্ত বন্ধ হবে না অপারেশেন সিঁদুর।