ভারতের যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে সোজা লাহোর! জানতে পেরেই দিল্লি যা করে…

Plane Hijack: কুরেশি দাবি করেছিলেন যে রাওয়ালপিন্ডির আর্মি এয়ার বেসে জাভেদ মিন্টো নামে এক পাক অফিসার তাঁকে বিমান ওড়ানোর ট্রেনিং দিয়েছিলেন। তাঁকে রাজীব গান্ধীর বিমান ছিনতাই করতে বলা হয়েছিল। রাজীব গান্ধী তখন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলট।

ভারতের যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে সোজা লাহোর! জানতে পেরেই দিল্লি যা করে...
প্রতীকী চিত্র।Image Credit source: Meta AI

|

Feb 17, 2025 | 2:27 PM

১৯৭১ সালের ৩০ জানুয়ারি। শ্রীনগর থেকে জম্মু যাওয়ার জন্য আকাশে উড়েছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। হল্যান্ডে তৈরি ছোট যাত্রীবাহী বিমান। ছোট্ট জার্নি। বিমান আকাশে ওড়ার পরই কেবিন ক্রুকে ধাক্কা মেরে ককপিটে ঢুকে পড়েন ১ যাত্রী। পাইলটের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন হাসিম কুরেশি। আর বন্দুক হাতে ককপিটের দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন অন্যজন, আশরাফ কুরেশি।

দুজনের কাঁধে ছিল দুটো ব্যাগ। তাঁরা দাবি করেন, ব্যাগে যে পরিমাণ বিস্ফোরক আছে, তা দিয়ে ৫-৬টা বিমান উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। সময়টা ১৯৭১ সাল। পূর্ব পাকিস্তানে সেই সময় পাক সেনার দমন-পীড়ন চলছে। মানুষের আন্দোলন দমন করতে যা খুশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে খান সেনাকে। ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোও তখন বাড়তি সতর্ক। সদ্য তৈরি হওয়া ‘র’-এর প্রধান আরএন কাওয়ের কাছে খবর ছিল যে ইয়াহিয়া খান ও তাঁর সেনা পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে বড় কোনও পরিকল্পনা করছে। পূর্ব পাকিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বিমান চলাচল অনেক বেড়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানের বিমানগুলিকে ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে হত।

ওই বছর পয়লা জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ‘র’ চিফ বলেছিলেন, ভারতের আকাশে এতগুলো পাক বিমানের ওড়াউড়ি বন্ধ করতে হবে। ওই সময় ‘র’ প্রধানের কাছে আরও একটা খবর আসে। ১৯৭০-র নভেম্বরে ভারত-পাক সীমান্ত পেরনোর সময় ধরা পড়ে যান কাশ্মীরের এক ব্যবসায়ী। জেরার মুখে ওই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের ক্যাডার। তাঁকে বিমান ছিনতাইয়ের প্রশিক্ষণ নিতে পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। ভারতে বেশ বড়সড় একটা বিমান নাশকতার পরিকল্পনা করেছে পাক সেনা ও জঙ্গিরা। সেই দায়িত্ব দিয়েই তাঁকে ভারতে ঢোকানো হয়েছে। ওই ব্যক্তিই হাসিম কুরেশি। যিনি পরবর্তী সময়ে জম্মুগামী বিমান ছিনতাই করেন।

কুরেশি দাবি করেছিলেন যে রাওয়ালপিন্ডির আর্মি এয়ার বেসে জাভেদ মিন্টো নামে এক পাক অফিসার তাঁকে বিমান ওড়ানোর ট্রেনিং দিয়েছিলেন। তাঁকে রাজীব গান্ধীর বিমান ছিনতাই করতে বলা হয়েছিল। রাজীব গান্ধী তখন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলট। জম্মু সেক্টরে বিমান চালাতেন তিনি। প্রশ্ন হল, যে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিমান অপহরণের দায়িত্ব পেয়েছে, সে দু-মাসের মধ্যে ছাড়া পেয়ে যায় কী করে? আজ এত বছর পর ডিক্লাসিফায়েড ফাইলে দেখা যাচ্ছে, ‘র’-এর নির্দেশেই হাসিম কুরেশিকে জেল থেকে বেঙ্গালুরুর সেফ হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কাশ্মীরে পৌঁছে দেওয়া হয়। কাশ্মীরে পৌঁছে নিজের তুতো ভাই আশরাফকে দলে টানেন হাসিম। কয়েকদিন চুপচাপ থেকে চড়ে বসেন জম্মুর বিমানে। বিমান হাইজ্যাক করে সেটিকে তিনি নিয়ে যান লাহোর। সঙ্গে সঙ্গে পাক সেনা বিমান ঘিরে ফেলে।

হাসিম ও আশরাফ কুরেশি ঘোষণা করেন, কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবিতে এই বিমান অপহরণ। ১৬ জন জেলবন্দি জঙ্গি নেতাকে মুক্তি না দিলে পণবন্দীদের হত্যা করা হবে। তখন ইসলামাবাদে মুজিবর রহমানের সঙ্গে লাঞ্চ করছিলেন পাক বিদেশমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো। দ্রুত লাহোর পৌঁছে দুই কুরেশির সঙ্গে কথা বলেন ভুট্টো। তাঁর পরামর্শেই ভারতের সঙ্গেও কথা বলেন হাশিম কুরেশি। তবে দিল্লি সাফ বলে দেয় যে কোনওভাবেই কোনও জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়া হবে না। এরপর ঘটনা যে পথে এগিয়েছিল, তাকে ব্যাখ্যা করা কঠিন। ১ ফেব্রুয়ারি বিমানের সব যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ ফেব্রুয়ারি কেউ বা কারা বিমানে আগুন লাগিয়ে দেয়।

কে আগুন লাগাল? কুরেশি ভাইরা দাবি করেন, আমরা নয়। পাকিস্তান পাল্টা বলে, আমরা কেন আগুন লাগাব? ওরাই লাগিয়েছে। এর কয়েকদিন পর ভারত ঘোষণা করে দেয়, পাক বিমানের জন্য ভারতের আকাশসীমা বন্ধ। পাকিস্তান জঙ্গিদের দিয়ে ভারতে বিমান ছিনতাই করাতে চাইছে, এই অভিযোগে রাষ্ট্রসংঘেরও দ্বারস্থ হয়েছিল দিল্লি। ২৯ মার্চ রাষ্ট্রসংঘ বলে দেয়, আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্তে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। পূর্ব পাকিস্তানে তখন অপারেশন সানশাইন শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতের উদ্দেশ্যটাও সফল হয়।