
নয়া দিল্লি: নতুন সংজ্ঞা নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক। তারপরই জনগণের নজরে এসেছে আরাবল্লী পর্বত এবং সেখানে কী চলছে। দেশের সবুজ বেল্ট, যা এতদিন সাধারণ মানুষকে মরুভূমি থেকে শুরু করে জলসঙ্কটের মতো বিপদ থেকে বাঁচাচ্ছে, সেই পর্বতমালাই ধ্বংসের মুখে। তবে এই প্রচেষ্টা কিন্তু নতুন নয়, বহু বছর ধরেই দিল্লি-রাজস্থানের ফুসফুস আরাবল্লীকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে নির্মাতা ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলি।
সুপ্রিম কোর্টের সম্মতিতে আরাবল্লীর ৯০ শতাংশ পাহাড়ই আর পর্বত নয়, কারণ এগুলির উচ্চতা ১০০ মিটারের নীচে। তবে বিতর্কের মুখে পড়ে কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে যে আরাবল্লীতে নতুন করে খননের কোনও লিজ দেওয়া হবে না। তবে বিতর্ক কিন্তু এখানে শেষ নয়।
যদি পরিবেশপ্রেমীরা আগেও আরাবল্লী নিয়ে আন্দোলনে না নামত, আদালত নির্দেশ না দিত, তাহলে এতদিনে দিল্লি, ফরিদাবাদ থেকে গুরুগ্রাম অবধি আরাবল্লীর যে রেঞ্জ রয়েছে, তা ধ্বংস হয়ে সেখানে হাই রাইজ বিল্ডিং হয়ে যেত। হরিয়ানায় যে দলেরই সরকার আসুক না কেন, বারবার আরাবল্লীকে সংরক্ষণের তালিকা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে, আরাবল্লীর মাটি দখল করে সেখানে খনন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
২০১৭ সালে হরিয়ানা সরকার ফরিদাবাদের ১৭ হাজার একর জমিকে বনাঞ্চল ভূমি বা ফরেস্ট ল্যান্ড থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল এনসিআর প্ল্য়ানিং বোর্ডের কাছে। ডিসেম্বরে বোর্ড সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়।
তার আগে ২০০৪ সালে ডিআরডিও (DRDO) আরাবল্লীতে ৭০০ একর জমি কেনে সেখানে তাদের তৈরি করতে। ২০০৫ সালে সেই জমি বেড়ে ১১০০ একর হয়ে যায়। তবে ওই বছরই বন সংরক্ষকরা ডিআরডিও-কে জানায় যে তারা যে জমি কিনেছে, তা পঞ্জাব জমি সংরক্ষণ আইনের অধীনে বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এখানে কোনও কাজ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সম্মতির প্রয়োজন।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০০৭ সালে ডিআরডিও জানায় তাদের ৪০৭ একর জমি দরকার। ফরিদাবাদ পুরসভা সেই জমি বরাদ্দও করে দেয়। ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্স বাকি থাকা সত্ত্বেও ডিআরডিও তিন কিস্তিতে ৭৩.২৬ কোটি টাকা দেয় হরিয়ানা সরকারকে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে জমি অধিগ্রহণ করে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ করা সেন্ট্রাল এমপাওয়ারড কমিটি নির্মাণের আবেদন খারিজ করে দেয়। ক্য়াগ (CAG)-ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেই দায়ী করে অবিবেচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
ফরিদাবাদ ও গুরুগ্রামের মাঝে, আরাবল্লীর বুকে রয়েছে মাঙ্গার গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মোড়া এই গ্রামে একটি ডাচ কোম্পানিকে টেকনোলজি পার্ক তৈরি করার জন্য ৫০০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভূপিন্দর হুডার কংগ্রেস সরকার। তখন আবার কেন্দ্র বাধা দেয়। তাও কংগ্রেস সরকার এই জমি বিক্রির প্রচেষ্টা করছিল। শেষে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে পিছু হটতে হয়।