
নয়া দিল্লি: যুগ বদলাচ্ছে। প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে যেমন গতি এসেছে, তেমনই বেড়েছে উদ্বেগও। চিন্তা বাড়িয়েছে সাইবার ক্রাইম, যা ক্রমাগত নিজের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। সাইবার ক্রাইমের বাড়বাড়ন্ত রুখতে অতীতে একটা লম্বা সময় ভারতকে নির্ভর করে থাকতে হয়েছে বিদেশি ফরেন্সিকসের উপর। কিন্তু, সে জমানা এখন আর নেই। এখন আমাদের কাছে রয়েছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ফরেন্সিকসও। দিল্লিতে আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী ফিউচার ক্রাইম সামিট ২০২৪-এ এই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সাইবার ফরেন্সিকসের উপর আলোকপাত করলেন প্রোডিসকভার সংস্থার সিইও নৃপুল রাও।
প্রোডিসকভার হল একটি সফ্টওয়্যার সংস্থা। যারা বিভিন্ন ধরনের সাইবার ক্রাইমের তদন্তে পুলিশ বা কোনও সরকারি সংস্থাকে সাহায্য করে। সংস্থার সিইও নৃপুল রাওয়ের বক্তব্য, ভারতে যেসব সাইবার ক্রাইম হচ্ছে বা হতে পারে, সেগুলি কীভাবে আটকানো যায়, সে বিষয়ে দেশীয় সংস্থাগুলির কাছে আরও ভাল সমাধানের উপায় রয়েছে।
ফিউচার ক্রাইম সামিটের মঞ্চে নৃপুল রাও জানালেন, ‘সরকারি এজেন্সিগুলি আমাদের সফ্টওয়্য়ার সংস্থার সাহায্য নিয়ে থাকে। ক্রিপ্টো কারেন্সি সংক্রান্ত কোনও অপরাধ হোক, বা কোনও সাইবার প্রতারণা, সফ্টওয়্যারের সাহায্যে এই ধরনের সমস্যাগুলির সমাধান করা যেতে পারে। তাই এই সম্মেলনে বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থা, সরকারি এজেন্সি ও আইন বিশেষজ্ঞরা এসেছেন। কারণ, সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হয়। আমাদের সংস্থা মেক ইন ইন্ডিয়া। সেই কারণে আমরা এখানকার সমস্যাগুলিকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারি।’
রাজধানীতে দু’দিন ধরে চলা এই সামিটের যৌথভাবে আয়োজন করেছে ফিউচার ক্রাইম রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং আইআইটি কানপুরের AIIDE COE। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাইবার বিশেষজ্ঞ, সরকারি এজেন্সির পদস্থ অফিসার, সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ ও এথিক্যাল হ্যাকাররা আমন্ত্রিত ছিলেন এই সম্মেলনে।
সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন সকলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রাক্তন সাইবার সিকিউকিটি অফিসার শৈলেন্দ্র বিক্রম সিংয়ের মতে, প্রযুক্তির যেমন সুবিধা আছে, তেমনই আবার ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। কিন্তু যেভাবে সাইবার ক্রাইমের প্রবণতা উত্তরোত্তর বাড়ছে, তাতে চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। দিল্লি পুলিশের এসিপি (সাইবার ক্রাইম) সঞ্জয় কুমার আবার বোঝালেন, কীভাবে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে জালিয়াতি হচ্ছে।
ই-সেক ফর্টি টেকনোলজিসের তরফে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডক্টর সন্তোষ খড়সরে বললেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত মামলায় এজেন্সি আমাদের সংস্থার থেকেও সাহায্য নেয়। আমরা সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থা… সকলের জন্যই কাজ করি।’ মেক ইন ইন্ডিয়া প্রযুক্তির পক্ষে জোরদার সওয়াল করলেন ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ নিলয় মিস্ত্রীও। সাইবার ফরেন্সিকের অত্যাধুনিক টুলস ও প্রযুক্তির বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। সঙ্গে এও বললেন, ফরেন্সিকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রযুক্তি আসার ফলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের অপসরপ্রাপ্ত এসপি (সাইবার ক্রাইম) ত্রিবেণী সিংয়ের কথায়, ‘সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে যখন সবাই একজোট হয়ে কাজ করে, তখনই সাফল্য আসে। সেই জন্য এখানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাই এক মঞ্চে বসে গঠনমূলক আলোচনা করলেন। যাঁরা এথিক্যাল হ্যাকার রয়েছেন, তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁরাও এখানে নিজেদের মতামত রাখছেন।’