স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের আকাশে অন্তত ১০০০টি যুদ্ধবিমান দাপাবে, এমনই প্রেস্টিজিয়াস টার্গেটের দিকে ঝাঁপাল ভারতীয় বায়ুসেনা। ফাইটার এয়ারক্রাফটের স্কোয়াড্রনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০টি করার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন বায়ুসেনার সিনিয়র কর্তারা। তাঁদের মতে, দেশের প্রতিরক্ষাকে মজবুত করতে, আকাশে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রভাবকে অটুট রাখতে এবং যে দ্রুত হারে প্রতিদিন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ বদলাচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে বায়ুসেনাকে এই টার্গেট ছুঁতেই হবে।
এই লক্ষ্য অর্জনে যেটা সবথেকে জরুরি, সেটা হল যুদ্ধ সরঞ্জামের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো ও নিরন্তর সরবরাহ। একই সঙ্গে উন্নততর প্রযুক্তি এবং লালফিতের ফাঁস থেকে যুদ্ধ সংক্রান্ত সরঞ্জাম কেনাকে মুক্ত করা। ২০৪৭ -এর মধ্যে এই সব বিষয়েও নজরদারির পক্ষে মত দিয়েছেন প্রতিরক্ষা কর্তারা। বায়ুসেনার হাতে আজ কমবেশি ২৬০টি আধুনিক দেশি ও বিদেশি যুদ্ধবিমান রয়েছে। রয়েছে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট তেজস এম কে ১, সুখোই সু-৩০ এমকেআই, মিগ-২৯, মিরাজ ২০০০, রাফালে, জাগুয়ার। এগুলিই মূলত দেশের বায়ুসেনার শিরদাঁড়া। পাশাপাশি, সদ্যই ভারত হাতে পেয়েছে ৩৬টি রাফালে। তেজস এমকে-১এ ৮৩টি অর্ডার দেওয়া হয়েছে ও আরও ৯৭টি অনুমোদন পেয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের।
এই মুহূর্তে ভারতের রয়েছে ৩১টি ফাইটার স্কোয়াড্রেন। যদিও সেটা অনুমোদিত ৪২ স্কোয়াড্রেনের চেয়ে বেশি খানিকটা কম। দুই ঝগড়ুটে প্রতিবেশী চিন ও পাকিস্তানের কীর্তির দিকে নজর রাখলে দ্রুতই সেই শূন্যস্থান ভরাট করা প্রয়োজন। এক একটি স্কোয়াড্রেনে ১৮-২০টি করে যুদ্ধবিমান থাকে। সহজ করে বললে, এই মুহূর্তে ভারতের কাছে রয়েছে সর্বমোট ৫০০-৬০০টি যুদ্ধবিমান। এই কমতির কারণ, বুড়ো হয়ে গেছে বেশ কিছু যুদ্ধবিমান। যেমন মিগ-২১, মিগ-২৩, মিগ-২৭ যে হারে বাতিল হচ্ছে সেই গতিতে নতুন যুদ্ধবিমান প্রস্তুত ও সরবরাহ হচ্ছে না বায়ুসেনার ভাঁড়ারে। এটাই আজ বায়ুসেনার মাথাব্যাথার সবচেয়ে বড় কারণ।
২০৪৭-এ ভারত চাইছে ৬০টি স্কোয়াড্রন তৈরি করতে। যার মানে ১০৮০-১২০০টি যুদ্ধবিমান। যা বাস্তবায়িত হলে ভারতীয় বায়ুসেনার সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। প্রতিবেশি চিন যেভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাদের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, তার মোকাবিলা করতে ভারতের যুদ্ধবিমানের সংখ্যাও বাড়ানো অবিলম্বে জরুরি হয়ে পড়েছে। বেজিংয়ের লালফৌজের কাছে এই মুহূর্তে কমবেশি ১৯০০টি ফাইটার জেট রয়েছে। যার মধ্যে জে-২০-র মতো ফিফ্থ জেনারেশনের মতো যুদ্ধবিমানও রয়েছে। পাক বায়ুসেনার কাছেও জেএফ ১৭-র মতো যুদ্ধবিমান রয়েছে। যদিও পাক বায়ুসেনার ক্ষমতা ভারতের থেকে এখনও সহস্রযোজন পিছিয়ে।
নয়াদিল্লির এখন লক্ষ্য আগামী দুই দশকে অন্তত আরও ৫০০-৬০০টি নতুন যুদ্ধবিমান বায়ুসেনাতে অন্তর্ভুক্ত করা। এর জন্য ত্রিমুখী নীতি অবলম্বন করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এক, মেক ইন ইন্ডিয়া ও আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের অধীনে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রস্তুত বিমানের সংখ্যা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, আমেরিকা-ফ্রান্স-ইজরায়েলের মতো দেশের কাছ থেকে বিমান কেনা। তৃতীয়ত, আমেরিকা-রাশিয়ার মতো বন্ধু দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধবিমান তৈরি করা। বায়ুসেনা কর্তারা মনে করছেন, প্ল্যানমাফিক এগোলে আগামী দুই দশকের মধ্যে এই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব।
ভারতের এই লক্ষ্যে সবথেকে বড় ভূমিকা নেবে হিন্দুস্তান এয়েরোনোটিক্স লিমিটেড বা হ্যাল। ইতিমধ্যেই বায়ুসেনা তাদের ১৮০টি তেজস এম-কে ১ ও এম-কে ১এ-এ অর্ডার দিয়েছে। সেই সঙ্গে ‘জিই এফ-৪১৪ ইঞ্জিন’ বিশিষ্ট তেজস এম কে-২ ও প্রায় তৈরি। তেজস এম কে-২ হল ৪.৫ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান। বায়ুসেনার লাইট ফাইটার জেট স্কোয়াড্রেনের তুরুপের তাস তেজস। ২০৪৭-এর মধ্যে অন্তত ২০০টি এরকম তেজস হাতে চায় সেনা। হ্যাল ও ‘এয়ারোনটিক্যাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সি’ বা এডিএ যৌথভাবে ফিফ্থ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট বা অ্যামকা প্রস্তুত করছে। ২০৪৭-এর মধ্যে অ্যামকা-র মতো ফিফ্থ জেনারেশনের বিমানের ১০-১২ স্কোয়াড্রন চায় সেনা। এত গেল দেশে তৈরি হওয়ার বিমানের পরিসংখ্যান। এবার নজর রাখা যাক, বিদেশ থেকে কিনতে চাওয়া প্রস্তাবিত যুদ্ধবিমানের তালিকায়। ২০৪৭ -এর মধ্যে রাফালে, এফ-১৫, এফ এ-১৮ সুপার হরনেট, সুখোই ৩৫, টাইফুন মিলিয়ে ১১৪টি নতুন মাল্টিরোল ফাইটার যুদ্ধবিমান চায় নয়াদিল্লি।