নয়া দিল্লি: এর বিষে নীল হয়ে যেতে পারে চিনের লাল ফৌজ। ভিড়মি খাবে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনার হাতে এসে গেল ‘নাগাস্ত্র-১’। কী এই নাগাস্ত্র? সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, প্রথম ‘লয়টারিং মিউনেশন’ বা ‘সুইসাইড ড্রোন’। লক্ষ্যবস্তু স্থির না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে পারে এই ড্রোনগলি। নাগ বা সাপ যেমন, ছোবল মারার জন্য সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, এই ড্রোনগুলিও সেভাবেই নকশা করা হয়েছে। লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে ওড়াউড়ি করতে করতে, সঠিক সময়ে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। নাগপুরের সোলার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘ইকোনমিক্স এক্সপ্লোসিভ লিমিটেড’ সংস্থাকে ৪৮০টি নাগাস্ত্র সরবরাহের বরাত দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সম্প্রতি, সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে এক সেনা আধিকারিক জানিয়েছেন, “প্রিডেলিভারি ইন্সপেকশন সফল হওয়ার পর, সেনার এক অস্ত্রাগারে, ইকোনমিক্স এক্সপ্লোসিভ লিমিটেড সংস্থা ১২০টি লয়টার মিউনেশন সরবরাহ করেছে।”
নাগাস্ত্র বস্তুত, একটি আনম্যানড ড্রোন ভিত্তিক যুদ্ধাস্ত্র। অর্থাৎ, মানববিহীন ড্রোনে অস্ত্র স্থাপন করা থাকে। এটি লক্ষ্যবস্তুর উপর স্থিরভাবে উড়তে পারে। এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ৪,৫০০ মিটার উচ্চতায় উড়তে পারে বলে কোনও রাডারেও এটি ধরা পড়ে না। তাই, অতর্কিতে হামলা চালাতে পারে। ধরা যাক, কোনও জঙ্গি নেতা তার কনভয় নিয়ে যাচ্ছেন। কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছনোর কথা তার। নাগাস্ত্র, সবার অলক্ষ্যে ওই নেতা আসার আগেই, ওই জায়গায় পৌঁছে গিয়ে আকাশে অপেক্ষা করতে পারে। লক্ষ্যবস্তু সেখানে এসে পৌঁছলে আচমকা হামলা চালাতে পারে।
এটি হামলা চালায় ‘কামিকাজে মোড’ বা আত্মঘাতী উপায়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন রণতরীগুলি ধ্বংস করার জন্য এই পন্থা নিয়েছিল জাপান। জাপানি বিমান বাহিনীর সেনারা, যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়ে যেত মার্কিন রণতরীর উপর। তারপর, বিমানটি নিয়ে ধাক্কা মারত জাহাজে। জাহাজটিও ধ্বংস হত, বিমানটিও। একইভাবে নাগাস্ত্রও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর সময়, লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার পাশাপাশি নিজেও ধ্বংস হয়। এতে রয়েছে জিপিএস-ভিত্তিক প্রযুক্তি। জিপিএস নির্দেশিত নির্দিষ্ট স্থানে হামলা চালাতে পারে। ভুলচুক হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২ মিটার। অর্থাৎ, জিপিএস-এর যে জায়গাটি দেখানো হয়েছে, তার ২ মিটার এদিক-ওদিক হতে পারে।
#WATCH | The first indigenous Loitering Munition, Nagastra–1, developed by Solar Industries, Nagpur, has been delivered to the Indian Army
Nagastra -1, in a ‘kamikaze mode’ can neutralize any hostile threat with GPS-enabled precision strike with an accuracy of 2m. The… pic.twitter.com/kWeehBMGvW
— ANI (@ANI) June 14, 2024
নাগাস্ত্র একটানা ৬০ মিনিট ধরে উড়তে পারে। কোনও মানুষ একে নিয়ন্ত্রণ করলে ১৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়তে পারে ড্রোনটি। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়লে, ৩০ কিলোমিটার দূরেও গিয়ে হামলা চলাতে পারে নাগাস্ত্র। দিনে ও রাতে নজরদারি চালানোর জন্য, নাগাস্ত্রে ডে-নাইট সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরাও আছে।
তবে, এর একটা বৈশিষ্ট, নাগাস্ত্রকে বিশ্বের অন্যান্য লয়টারিং মিউনেশনের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কথায় বলে, তির একবার থুড়লে তাকে আর ফেরানো যায় না। কিন্তু, নাগাস্ত্রকে অভিযানের মাঝপথে ফিরিয়েও আনা যায়। সেটিকে উদ্ধার করে ফের ব্যবহার করা যায়। যদি নাগাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুকে খুঁজে না পায়, কিংবা অভিযান বাতিল করা হয়, সেই ক্ষেত্রে সেটিকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে প্যারাশুটের মাধ্যমে সফট ল্যান্ডিং করানো যায়। বিশ্বের একাধিক উন্নত দেশই এই ধরনের কামিকাজে ড্রোন তৈরি করেছে। কিন্তু, ফিরিয়ে নিয়ে আসার মতো প্রযুক্তি কোনোটিতেই নেই।