
নয়া দিল্লি: বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় সেনার ব্রহ্মসের সফল কমব্যাট লঞ্চ। লক্ষ্যভেদে আবারও প্রমাণিত হল বিশ্বের দ্রুততম ক্রুজ মিসাইলের সক্ষমতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী সফলভাবে ব্রহ্মস (BrahMos) সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের কমব্যাট লঞ্চ সম্পন্ন করেছে।
গত ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ কম্যান্ডের ব্রহ্মস ইউনিট আন্দামান-নিকোবর কম্যান্ডের সহযোগিতায় এই লঞ্চ পরিচালনা করেছে। এই পরীক্ষায় একদিকে যেমন মিসাইলের গাইডেন্স সিস্টেম পরীক্ষা করা হয়েছে, তেমনই উচ্চগতিতে ক্রুজ মিসাইলের স্থিতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণক্ষমতাও পরীক্ষা করা হয়েছে। কতটা নির্ভুলভাবে স্ট্রাইক বা আক্রমণ করতে সক্ষম ব্রহ্মস, তাও প্রমাণিত হয়েছে এই পরীক্ষামূলক লঞ্চে।
এই ব্রহ্মস সুপারসনিক লঞ্চ আবারও দেখিয়ে দিল যে ব্রহ্মস শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, দ্রুততম ও শক্তিশালী স্ট্যান্ড-অফ অস্ত্র। অপারেশনাল পরিস্থিতিতে এই পরীক্ষা ভারতীয় সেনার যুদ্ধ প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করল।
ভারতীয় সেনার ব্রহ্মস ইউনিটেরর দক্ষিণ কমান্ড এবং তিন বাহিনীর আন্দামান-নিকোবর কমান্ড যৌথ ভাবে এই পরীক্ষাটি চালিয়েছে। এটি ছিল একটি সুনির্দিষ্ট পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। এর মাধ্যমে ব্রহ্মসের পাল্লা-সহ বিভিন্ন মাপকাঠিতে পরখ করে দেখা হয় ক্ষেপণাস্ত্রটি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ব্রহ্মসের উন্নত দিক্নির্দেশনা ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, বেশি গতিতে ছুটে যাওয়ার সময়ে স্থিতিশীলতা, নির্ভুলতা এবং নির্দিষ্ট ভাবে নিশানায় আঘাত হানার ক্ষেত্রে ফের সফল হয়েছে ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি।
প্রসঙ্গত, অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে আরও একবার চর্চায় চলে এসেছে এই ক্ষেপণাস্ত্র। এমনকী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ় শরিফের বক্তৃতাতেও উঠে এসেছিল রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে তৈরি সেই ব্রহ্মস ক্রুজ় সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও ইসলামাবাদকে হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে অপারেশন সিঁদুর অভিযান শুধুই ঝলক ছিল। পাকিস্তানের প্রতিটি কোণাই ব্রহ্মসের নাগালের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
এরই মধ্যে সম্প্রতি দক্ষিণ চিন সাগরে ইসলামাবাদের বন্ধু বেজিংয়ের আগ্রাসন রুখতে ভারত থেকে কেনা সেই ক্ষেপণাস্ত্রেই ভরসা রেখেছে ফিলিপিন্সও। সেখানে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে।
অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে ব্রহ্মসের পাল্লা আরও বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত। স্থলভূমি বা যুদ্ধজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্রহ্মসের পাল্লা ২৯০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। বিমান বা ডুবোজাহাজে ব্যবহৃত সংস্করণের কিছুটা কম। নতুন পাঁচ দফা পরিকল্পনায় ব্রহ্মসের পাল্লা এবং গতিবেগ দু’টিই বাড়ানো হচ্ছে।
দাবি করা হচ্ছে, নয়া সংস্করণে স্থল বা যুদ্ধজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্রহ্মসের পাল্লা হবে ৮০০ কিলোমিটার। পাশাপাশি, সুপারসনিক থেকে হাইপারসনিক (শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বা তার বেশি গতিবেগসম্পন্ন) ক্ষেপণাস্ত্রের স্তরে উন্নীত হবে ব্রহ্মস। এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরের বুকে ব্রহ্মস পরীক্ষা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।