
একে রাফালে রক্ষা নেই, এবার তার দোসর হচ্ছে দেশি ASTRA এয়ার টু এয়ার মিসাইল। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতেই নির্মিত এই নয়া অস্ত্র মিসাইল হতে ভারতীয় সেনার তুরুপের তাস। কেন? সেটাই দেখব আজকের প্রতিবেদনে।
এখন একথা সকলেরই জানা যে, আইএনএস ভিক্রান্ত (INS Vikrant)-এর জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে সম্প্রতি ২৬টি রাফালে মেরিন জেট (Rafale-Marine jet) ৬৩,০০০ কোটি টাকায় কিনছে মোদী সরকার। ওই রাফালে মেরিনের সঙ্গেই কোনও আমেরিকান বা ইউরোপীয়ান অস্ত্র নয়, জুড়বে ভারতের অস্ত্র এমকে সিরিজের অত্যাধুনিক মিসাইল (Astra MK missiles)। ২০২৮-এর মধ্যে রাফালে মেরিন এসে গেলেই ভারতীয় নৌসেনার আইএনএস ভিক্রান্ত থেকে ‘অস্ত্র’ মিসাইল শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, যেখানে রাফালে মেরিনের মতো জেট সাধারণত ইউরোপীয়ান স্ট্যান্ডার্ডে নির্মিত MICA বা এয়ার টু এয়ার মিসাইল ব্যবহার করে, সেখানে ভারত কেন অস্ত্র-এর উপর ভরসা রাখল?
এখানেই লুকিয়ে আসল রহস্য!
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে Astra সিরিজের এক একটি মিসাইলের ক্ষমতার দিকে নজর রাখতে হবে।
ভারতের প্রথম বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইল (BVRAAM) হল অস্ত্র Mk1। ইংরেজিতে লেখা হলেও নাম রাখা হয়েছে সংস্কৃত ‘অস্ত্র’ থেকে। ডিআরডিও-র (Defence Research and Development Organisation) অধীনস্থ হায়দরাবাদ কেন্দ্রীক সংস্থা Defence Research and Development Laboratory বা DRDL এটি তৈরি করে। এই মিসাইল তৈরিই করা হয়েছে আকাশপথে যুদ্ধের জন্য। মানে এই মিসাইল ‘এরিয়াল ওয়ারফেয়ারে’ দক্ষ। শব্দের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ জোরে ছোটে, গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০০ কিলোমিটার। ১১০-১২০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম Mk1। একবার লঞ্চ করে দেওয়ার পরেও এর গতিপথ মাঝপথে পাল্টানো যায়। লঞ্চ করা হয়েছে যে এয়ারক্রাফট থেকে তার সঙ্গে এনক্রিপ্টেড ডেটার মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলে এই মিসাইল। ২০০৪-এর এপ্রিলে এটি চূড়ান্ত ছাড়পত্র পায় এবং তারপর থেকে সুখোই যুদ্ধবিমান থেকে এটি লঞ্চ করার পরিকল্পনা হয়।
Astra Mk2 ১৪০-১৬০ কিলোমিটার রেঞ্জের। আর ‘অস্ত্র’ সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক মিসাইল হবে Mk3, যার টার্গেট রেঞ্জ ৩০০-৩৫০ কিলোমিটার। অর্জুনের শক্তিশালী ধনুক গাণ্ডীবের নামে এই মিসাইলের নামও ‘গাণ্ডীব’। এখন রাফালের সঙ্গে যুক্ত এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটারের আশেপাশে হলেও দ্রুতই ৩৫০ কিলোমিটার পাল্লার অত্যাধুনিক সুপার BVRAAM-হিসাবে বায়ুসেনা হাতে পাবে গাণ্ডীব। শব্দের চেয়ে ৪.৫ গুণ জোরে ছোটে এই নেক্স জেন মিসাইল। একবার তৈরি হয়ে গেলে জুড়ে দেওয়া হবে রাফালে মেরিনের সঙ্গে। আপাতত সুখোই ও তেজসে এই সিরিজের এমকে ১ ভার্সনের মিসাইল ব্যবহার হয়।
শুরুতে Mk সিরিজের মিসাইল ১-কে ২০১৪-২০১৯ পর্যন্ত অন্তত ৩৫ বার এয়ার টু এয়ার লঞ্চ করে দেখা হয় কোথাও কোনও খামতি রয়ে গেছে কি না! কমপক্ষে ১৫০ বার যুদ্ধবিমান চাপিয়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এই মিসাইল পরীক্ষা করা হয়াছে। সব পরীক্ষায় সফল হওয়ায় ২০১৯-এ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সুখোই-৩০ এমকেআই(Su-30MKI), এলসিএ তেজস এমকে১এ (LCA Tejas Mk1A)-র সঙ্গেই এতদিন ‘অস্ত্র’ জুড়ে রাখা হচ্ছিল। কিন্তু এবার তার সাফল্যের নজিরের পর একে মিগ্ ২৯কে ও রাফালের সঙ্গেও জোড়ার ভাবনা বায়ুসেনার।
রেডার গাইডেড বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের (BVRAAM) মধ্যে Astra Mk সিরিজের মিসাইলগুলি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও যোগ্যতাসম্পন্ন। যুদ্ধের সময় বিদেশি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল না হয়ে থেকে ৭-৮ কোটি টাকা দামের এই মিসাইল তাই হতে পারে ভারতের তুরুপের তাস। ভারতেই তৈরি হয় বলে যুদ্ধের মতো আপৎকালীন পরিস্থিতে মিসাইল কেনার জন্য বিদেশি রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। এই একই মিসাইল ফ্রান্স বা আমেরিকার কাছ থেকে কিনতে হলে এক একটির দাম পড়ত ২৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। এর প্রতিদ্বন্দ্বী চিনা পিএল-১৫ মিসাইল যেগুলি জে-২০ বা জে-১০ এর সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করা রয়েছে সেগুলি সর্বোচ্চ ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। পাকিস্তানের কাছে Astra Mk1-এরই কোনও জবাব নেই। আমেরিকার কাছ থেকে কেনা তাদের AIM-120C5 মিসাইল মাত্র ৮০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। সেখানে গাণ্ডীব উড়তে পারবে ৩০০ কিলোমিটার।