
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এক নতুন ইতিহাস রচনা করল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। একদা GSLV Mark 3 নামে পরিচিত ‘বাহুবলী’ রকেট LVM3-M5 ব্যবহার করে দেশের মাটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হলো সবচেয়ে ভারী উপগ্রহ, GSAT-7R (CMS-03)। প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই সামরিক স্যাটেলাইট ভারতের নৌ-সুরক্ষাকে এক নতুন মাত্রা দেবে। এটি কেবল একটি উৎক্ষেপণ নয়, ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর এক বিরাট সাফল্য হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
সাধারণত, এই ধরনের কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটগুলোকে প্রথমে জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিট বা GTO-তে স্থাপন করা হয়। LVM3 রকেট এই GTO-তে সাধারণত ৪ হাজার কেজি পর্যন্ত পেলোড বহন করতে পারে। কিন্তু স্যাটেলাইটের ওজন ৪ হাজার ৪০০ কেজি হওয়ায় ইসরো একটি বিশেষ কৌশল নেয়। স্যাটেলাইটটিকে প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে অর্থাৎ, ২৬ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা হয়। এরপর উপগ্রহটি নিজেই নিজের ভেতরের জ্বালানি ব্যবহার করে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে তার চূড়ান্ত জিওস্টেশনারি কক্ষপথে পৌঁছে যায়।
এই বিশেষ কক্ষপথকে জিওস্টেশনারি বলা হয়। এর মানে, পৃথিবী তার ২৪ ঘণ্টার আবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপগ্রহটি সব সময় ভারতের ভূ-ভাগের ঠিক উপরে স্থির থাকবে। ভারত মহাসাগরীয় এলাকার বিশাল সমুদ্রে মোতায়েন থাকা নৌসেনার জাহাজ, সাবমেরিন, এবং বিমানগুলির মধ্যে সুরক্ষিত এবং রিয়েল-টাইম তথ্য, ভিডিয়ো ও ভয়েস যোগাযোগ স্থাপন করাই এর প্রধান কাজ।
এক দশক পুরনো ২,৬৫০ কেজি ওজনের GSAT-7, যা নাম রুক্মিণী, তার বদলে এবার কাজ করবে এই নতুন উপগ্রহ। এটি একসময় বিদেশের রকেটে উৎক্ষেপণ করতে হয়েছিল। ইসরোর চেয়ারম্যান ডাঃ ভি. নারায়ণন বলেছেন, এটি ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আগামী ১৫ বছর ধরে এই স্যাটেলাইটটি নৌ-বাহিনীকে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দেবে। বিদেশী নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে এই বিপুল ক্ষমতার স্যাটেলাইট স্থাপন ভারতের মহাকাশ গবেষণা ও প্রতিরক্ষা শক্তির এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল।