
পাল্টে যাচ্ছে মোবাইল ফোনে কলার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম। আগামী বছরের মার্চ থেকে ঐতিহাসিক বদলের সাক্ষী থাকবে গোটা দেশ। এতদিন কারও ফোন এলে শুধু তাঁর নম্বর ভেসে উঠত। মার্চ, ২০২৬ থেকে সমস্ত ভারতীয় মোবাইল ফোন ইউজাররা জানতে পারবেন, কে ফোন করছে। সেটাও আবার কোনওরকম থার্ড পার্টি অ্যাপ ছাড়াই। এই নয়া পরিষেবার পোশাকি নাম- CNAP বা Caller Name Presentation।
কোনটা দরকারি ফোন আর কোনটা মার্কেটিং বা স্প্যাম কল — জানতে এতদিন আমাদের ভরসা ছিল ট্রু-কলারের মতো থার্ড পার্ট অ্যাপ। সুইডেনের সংস্থার বিরুদ্ধে ভারতের মোবাইল ইউজারদের তথ্য ফাঁসের অভিযোগের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। একইসঙ্গে আপনার মোবাইল ফোনের নানা সেটিংসের অনুমতি দিতে হয় অ্যাপ-টিকে। অনেক সময় বহু ইউজার-ই না পড়েই অনেক অনুমতি অ্যাপটিকে দিয়ে দেন। ব্যক্তিগত মেসেজ, টাকা পয়সার লেনদেন সংক্রান্ত মেসেজ, এমনকী ওটিপি-র মতো সংবেদনশীল তথ্যেরও অ্যাকসেস দিতে হয় ট্রু-কলারকে।
২০১৯, ২০২০, ২০২৪– বারবার ভারতীয় গ্রাহকদের নাম, ইমেল আইডি, ঠিকানা, পেশার হদিশ, আয়, এমনকী সোশ্যাল মিডিয়া আইডি-ও ডার্ক ওয়েবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ থেকে ভারতীয় সেনায় ট্রু-কলারের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ২০২২-এ স্টকহোমের সংস্থার বিরুদ্ধে আয়ের ভিত্তিতে গ্রাহকদের আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরির অভিযোগ উঠেছে। এমনকী গুগলের মতো টেক জায়ান্ট সংস্থাও একচেটিয়া ব্যবসার জন্য ট্রু-কলারকে যথেচ্ছ অনুমতি দিয়ে রেখেছে বলে গতবছরই ভারতীয় কম্পিটিশন কমিশনে মামলা দায়ের হয়। কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে ট্রু-কলারের গুরুগ্রামের দফতরে হানা দেয় আয়কর দপ্তর।
ট্রু-কলারের মতো থার্ড পার্টি অ্যাপের উপর নির্ভরতার দিন শেষ হচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে কলার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম। এখন থেকে ফোন এলে, যে ফোন করছে শুধু তার নম্বরই নয়, তাঁর নামও মোবাইলের স্ক্রিনে উঠবে। ব্যাঙ্ক বা স্প্যাম কলের ক্ষেত্রেও একইভাবে অ্যালার্ট করবে এই সিস্টেম। ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (DOT)-কে এই নয়া সিস্টেম তৈরির অনুমতি দিয়েছে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা TRAI। ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট ফোরজি ও ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন সিস্টেমের ট্রায়াল-ও শুরু হয়েছে।
নতুন সিস্টেমে কী সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা?
তবে নয়া সিস্টেম চালুর রাস্তাটা কিন্তু ট্রাই বা ডট -কারও কাছেই সহজ নয়। কারণ, রিলায়েন্স জিও, ভোডাফোন, এয়ারটেল ভারতী-মতো সংস্থা বাড়তি খরচের যুক্তি দেখিয়ে CNAP-কে বাধ্যতামূলক করার বিরোধী। টেলিকম অপারেটররা নয়া সিস্টেম চালুর আগে তার প্রযুক্তিগত ত্রুটিও খতিয়ে দেখতে চাইছেন। তবে বেনজিরভাবে, ‘ট্রু-কলার’ ট্রাইয়ের নয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। গ্রাহকদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে ভারত সরকারের সব পদক্ষেপে পাশে আছি বলে বিবৃতি দিয়েছে সুইডেনের সংস্থাটি। দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেলে ভারতের টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে তো বটেই, গোটা বিশ্বের বৃহত্তম কেন্দ্রীয় ভেরিফায়েড কলার আইডি সিস্টেম হবে CNAP।