
কলকাতা: গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় নিঃশব্দে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ দেশজুড়ে কত বড় নাশকতার ছক বানচাল করল, সেটা অনেকেই এখনও জানেন না! কাশ্মীর তো বটেই, এমনকী গুজরাট, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে যেভাবে জইশ জঙ্গি ও জঙ্গিদের মদতদাতাদের ধরে ধরে গ্রেফতার করা হল, তা যে কোনও টানটান একটা ওয়েব সিরিজকেও হার মানাবে।
সূত্র ১: কাশ্মীর– ১৯ অক্টবর ঘটনার সূত্রপাত। কাশ্মীরের নৌগামে বুনপরায় জৈশ-ই-মহম্মদের পোস্টারে ছয়লাপ এলাকা। সেনা,পুলিশ, সরকারি অধিকারিকদের নিশানা করা হয় পোস্টারে। অপারেশন সিঁদুরের পর এতটা খোলাখুলি জইশের পোস্টার ভূস্বর্গে দেখা যায়নি। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী অস্ত্র, বিস্ফোরক ও UAPA আইনে মামলা রুজু করে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। ২৭ অক্টবর ধরা পরে ডাক্তার আদিল আহমেদ, অনন্তনাগের সরকারি হাসপাতালের চিকিতসক। সোশ্যাল মিডিয়া ও এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে কাশ্মীরি বাচ্চা ও মুসলিম যুবকদের জৈশ দলে নাম লেখাতে উৎসাহ দিত।
সূত্র ২, ফরিদাবাদ: আদিলকে ‘ডোজ’ দিতেই বেরিয়ে এক এক করে তার বাকি সঙ্গীসাথীদের নাম বেরোতে শুরু করে। ৩০ অক্টবর দিল্লির কাছে হরিয়ানার ফরিদাবাদ একযোগে তল্লাশি চালায় জম্মু-কাশ্মীর ও হরিয়ানা পুলিশ। তখনই এক কাশ্মীরি চিকিৎসক ডাক্তার মুজম্মল শাকিল নামে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক গ্রেফতার। তার বাড়ি ও চেম্বার থেকে উদ্ধার প্রায় ২৯০০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়ম নাইট্রেট, পাওয়া গেল প্রচুর ,আগ্নেয়াস্ত্র। শহুরে শিক্ষিত, আর্বান মানুষরাও যে জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে, তার আরও একটা জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ যেন এই ঘটনা। পুলিশ এই দলটাকে জইশের White-Collar নেটওয়ার্ক বলছে। ফরিদাবাদের মুজম্মলের সূত্র ধরেই তার প্রেমিকা ডাক্তার শাহীনকেও এদিন পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
সূত্র ৩: গুজরাট- এটিএসের হাতে গ্রেফতার ৩ ISIS জঙ্গি। এদের মধ্যেও একজন আবার ডাক্তার। আহমেদ মইনুদ্দিন সৈয়দ হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা, বয়স ৩৫। এর কাছেই মেলে ‘রাইজিন’ নামে এক মারাত্মক বিষ। খাবারে এই বিষ একবার মেশাতে পারলে সায়ানাইডের চেয়েও বেশি তীব্র বিষক্রিয়া হবে। জঙ্গিরা এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফল ও সবজির বাজার দিল্লির আজাদপুর মান্ডি-সহ আহমেদাবাদ ও লখনউ-তে আরএসএস-এর দফতরের কাছে বাজারে বিক্রি হওয়া সবজিতে এই বিষ মেশালে কয়েক লক্ষ মানুষ চুপচাপ মারা যেতে পারত। কারণ, এই বিষের কোনও প্রতিষেধক নেই, যে খাবে সেই মারা যাবে। মানে একটাও বোমা ফাটবে না, একটাও গুলি চলবে না। স্রেফ চুপচাপ কয়েক লাখ ভারতবাসী বাড়িতে রান্না করা খাবার বা ফল খেয়ে মরে যাবে। বা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়বে। অধুনা সন্ত্রাসবাদের ভাষায় একে বলে- বায়ো-কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার।
এই মইনুদ্দিন চিন থেকে ডাক্তারি ও রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করে ভারতে এসে নাশকতার ছক কষেছিল। ইসলামিক স্টেটের আবু খাদিম এর মগজধোলাই করে ভারতে পাঠায় নাশকতার জন্য। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা CIA-র প্রধান কাশ প্যাটেল কয়েকদিন আগেই চিন থেকে আসা প্রায় একইরকম রাসায়নিক মার্কিনিদের খাবারে মেশানোর অভিযোগে একাধিক চিনা সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে তাদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে রেখেছে।