দিল্লিতে বসেই এক বোতামে ধ্বংস হতে পারে মস্কো, বেজিং, জাপান! আন্দামানের গোপন ডেরায় কি ভারতের K-5 SLBM?
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ করে কেন এখন এই আলোচনা? এই আলোচনা উঠে আসার পিছনে রয়েছে ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি ম্যাপ। সম্প্রতি একটি ম্যাপকে ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা দুনিয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়া সমীকরণকে মাথায় রেখে নিজেদের সামরিক ভাণ্ডারকে ভারত দ্রুত উন্নত করছে। ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারে রয়েছে পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন কে-৫ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল (submarine-launched ballistic missile বা SLBM)। যার পাল্লা ৮০০০ কিলোমিটার। যদি ১০০০ বা ২০০০ কেজির ভারী পে-লোড চাপানো হয়, তাহলেও ন্যূনতম ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে নির্ভুল নিশানায় K-5 SLBM হামলা চালাতে পারে। সহজ করে বললে, দিল্লিতে বসেই টার্গেট করা যাবে ইউরোপ, কাজাখস্তান থেকে শুরু করে পূর্ব এশিয়ার প্রায় সবকটি দেশকেই। যে সব দেশকে হয় ভারত মহাসাগর বা প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে রেখেছে, প্রায় সেই সব এশীয় ও আফ্রিকান দেশই এখন ভারতের পারমাণবিক হামলা ক্ষমতার পাল্লার অধীনে। তবে ভারতের পারমাণবিক নীতি হল, আগে হামলা নয়। অর্থাৎ প্রথমে হামলা ভারত চালাবে না। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কেউ যদি পারমাণবিক হামলা চালায় তাহলে সেই হামলাকে প্রতিরোধ করে পাল্টা হামলা চালানোর ক্ষমতা এখন ভারতের রয়েছে।

এটাই সেই ম্যাপ যাকে ঘিরে এত হইচই
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ করে কেন এখন এই আলোচনা? এই আলোচনা উঠে আসার পিছনে রয়েছে ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি ম্যাপ। সম্প্রতি একটি ম্যাপকে ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা দুনিয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে। ম্যাপটিতে দেখা যাচ্ছে, ভারত মহাসাগরের এক গোপন নৌসেনা ঘাঁটিতে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে একটি K-5 SLBM-এর অবস্থান। ভারত সাধারণত এই এলাকায় নিজের অরিহন্ত ক্লাস নিউক্লিয়ার সাবমেরিনকে পাহারায় রাখে। তবে কি ভারতেরই কোনও ডুবোজাহাজে মোতায়েন করা রয়েছে এই পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন কে-৫ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল? ম্যাপটিতে আশেপাশের প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার পাল্লাকে একটি লাল গোল করে মার্ক করা আছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ফাঁস হওয়া ম্যাপ যদি সত্যি সত্যি ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রের গোপন অবস্থানকে চিহ্নিত করে, তাহলে জাপান থেকে অস্ট্রেলিয়া, মস্কো থেকে মালি এই মারণ ক্ষেপণাস্ত্রের মূল রেঞ্জে পড়ছে। সেই সঙ্গে চিন, ব্রিটেন, সুইডেন, নরওয়ে পর্যন্ত ভারতের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের বৃহত্তর পাল্লার মধ্যে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই ক্ষমতা দেশের সেনাবাহিনীর পেশিশক্তির আস্ফালন নয়, কিন্তু শত্রুদের কাছে এটা স্পষ্ট করে দেবে কে এই ভারতের পক্ষে অসম্ভব কিছুই নেই। শত্রুকে সাবধান করে দেওয়া– এই ভারতের উপর হামলা চালালে ছেড়ে কথা বলে না!
কে-৫ তৈরি করেছে ডিআরডিও। ৩৫০০ কিলোমিটার পাল্লার কে-৪ এসএলবিএমের সাফল্যের পর তৈরি হয় তার উত্তরাধিকারী কে-৫। এই ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে ভারতের আইএনএস অরিহন্ত ও আইএনএস অরিঘাত। কে-৪ এতদিন পাকিস্তান ও চিনের পশ্চিমের কয়েকটি প্রদেশকে নিজেদের হামলার পাল্লার ভিতরে রাখতে, কিন্তু নতুন K-5 SLBM মূল চিনা ভূখণ্ডে অস্ত্র উৎপাদনকারী এলাকাগুলি ও দক্ষিণ চিন সাগরে লালফৌজের ঘাঁটিগুলিকেও নিজেদের পাল্লার আওতায় নিয়ে এল। K-5 SLBM ভারতের ত্রিমুখী পারমাণবিক হামলার অভিমুখকে সম্পূর্ণ করল। মাটিতে, আকাশে ও সমুদ্রে — তিন জায়গা থেকেই এখন ভারত আক্রান্ত হওয়ার পরেও পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালাতে পারবে। ভারত মহাসাগরের অতল থেকে আচমকা ধেয়ে আসা K-5 SLBM-এর হামলা আটকানো কার্যত অসম্ভব দুশমনের পক্ষে। কারণ ততক্ষণে এই মিসাইল শত্রুর নাকের ডগায় পৌঁছে যাবে। খাতায় কলমে, দিল্লিতে বসেই টার্গেট এখন বেজিং। আর শুধু বেজিং কেন, নেটো-র ইস্টার্ন কমান্ড ও রাশিয়ার সাউদার্ন সীমান্তকেও এক বোতাম টিপে টার্গেট করতে পারে নয়াদিল্লি। এখন এক একটি অরিহন্ত সাবমেরিন ৪টি করে কে সিরিজের মিসাইল বহন করতে পারে। তবে ২০৩০-এর মধ্যে এস ফাইভ ক্লাসের সাবমেরিন হাতে পেলে নৌসেনা একসঙ্গে আরও অনেক বেশি K-5 SLBM বহন করতে পারবে।





