জম্মু: টিভিতে ছেলের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবর দেখেই রাতের ঘুম উড়েছিল পরিবারের। একদিকে পাঁচ বছরের নাতনির কান্না থামানোর চেষ্টা, অন্যদিকে অজানা বিপদের আশঙ্কায় প্রতি মুহূর্ত উদ্বেগে কাটানো। এভাবেই বিগত পাঁচদিন কেটেছে ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী অভিযানে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া জওয়ানের পরিবারের। বৃহস্পতিবার মাওবাদীদের হাত থেকে ছেলের মুক্তির খবর শুনেই গোটা গ্রামে মিষ্টি বিলি করেছেন জওয়ানের মা। মন্দিরে গিয়ে ছেলের জন্য প্রার্থনা করে জ্বালিয়েছেন অখণ্ড জ্যোতি।
জম্মুর বারনাই এলাকার বাসিন্দা ওই জওয়ান গত শনিবার মাওবাদী নেতা হিদমা ও তাঁর সঙ্গী সুজাতাকে গ্রেফতার করতে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা-বিজাপুর জঙ্গলে গিয়েছিল। কিন্তু আচমকাই যৌথ বাহিনীর দুই হাজার সেনাকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে মাওবাদীরা। এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালাতে শুরু করে। ঘটনায় নিহত হন ২২ জন জওয়ান, আহত হন কমপক্ষে ৩১ জন। দুদিন ধরে জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়েও খোঁজ মেলেনি রাকেশ্বর সিং মানহাসের (৩৫)। পরে মাওবাদীরা জানায়, তাঁদের কবজায় রয়েছেন নিখোঁজ জোয়ান।
এ দিকে, টিভিতে রাকেশ্বরের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে সহ পরিবারের লোকজন। ভিডিয়োবার্তায় রাকেশ্বরের মুক্তি চেয়ে কাতর আবেদনও জানান তাঁরা। অবশেষে পাঁচদিনের মাথায় গতকাল গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে মুক্তি দেওয়া হয় ওই জওয়ানকে।
স্বামীর মুক্তির খবর শুনেই তাঁর স্ত্রী মিনু বলেন, “আমি খুব খুশি। সংবাদ মাধ্যমে প্রথম ওর মুক্তির খবর পাই। পরে কয়েকজন সিআরপিএফ জওয়ানও এসে ওর মুক্তির খবর জানায়। উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন যেভাবে ফিরে এসেছিলেন, একইভাবে ও ফিরে এল।” রাকেশ্বরের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা ওর জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম। আজকের দিনটা দিওয়ালির থেকে কম নয়।” তাঁর পাঁচবছরের মেয়ের মতে, ভগবান তাঁর আবেদন শুনেই বাবাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।
রাকেশ্বরের মুক্তির খবর পেয়েই তাঁরা প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। টিভিতে ছেলের মুক্তির ভিডিয়ো দেখেই তাঁরা “প্রধানমন্ত্রী মোদী জিন্দাবাদ, অমিত শাহ জিন্দাবাদ” ও “ভারত মাতা কি জয়” বলে স্লোগান দেন। এরপর গোটা গ্রামে মিষ্টি বিতরণ ও স্থানীয় মন্দিরে অখণ্ড জ্যোতিও প্রজ্বলন করেন।
সূত্র অনুযায়ী, সোনি সোরি নামক এক স্থানীয় সমাজকর্মীর মধ্যস্থতাতেই মাওবাদীরা মানহাসকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়। মুক্তির পর তাঁকে তারেম ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়, সেখানে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয় তাঁর।