Exclusive: ‘কাশ্মীরের পেটে লাথি মেরেছে, ওদের ক্ষমা নেই’, পহেলগাঁও থেকে লিখছেন খুরশিদ
টিভি ৯ বাংলা ডিজিটাল থেকে যখন যোগাযোগ করা হল, প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না যে কী লিখব...কিন্তু লিখতে তো আমাকে হবেই, জানাতে হবেই আমার কেমন অনুভূতি, আমাদের কেমন অনুভূতি, আপামোর উপত্যকাবাসী কী ভাবছেন।

সারারাত ঘরের জানলাটা খোলাই ছিল। যে জানলা দিয়ে এতদিন শুধু পহেলগাঁওয়ের পাইন গাছ বেয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকত, উপত্যকার সবুজ জমি ঠিকরে চাঁদের আলো ঢুকত, সেই হাওয়ায় আজ বারুদের গন্ধ। সেই চাঁদের আলো রক্তের মতো লাল! মাথা কাজ করছিল না আমার। হঠাৎ কী হয়ে গেল! ভাবতেই পারছি না। ঘুমোতে পারিনি। দমবন্ধ লাগছিল। যে আরু ভ্যালিতে গত সোমবার টুরিস্টরা আনন্দে মজে ছিলেন, ঘোড়া চড়ছিলেন, ট্রেক করছিলেন, গানের সঙ্গে রিলস বানাচ্ছিলেন সেই আরু ভ্যালিই আজ শূন্য! আমি এখানে একটা রিসর্ট চালাই। ছোট্ট রিসর্ট। সাধ করে নাম রেখেছি নিউ আইস বার্গ। মূলত, ট্রেকাররা আসেন। দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিয়ে কটা মাস সরগরম থাকে আমার এই রিসর্ট। কত আড্ডা, কত গল্প। টুরিস্টরা তো আমাদের কাছে ভগবানের স্বরূপ। আমিও তাঁদের সঙ্গে ট্রেকে বেড়িয়ে পড়ি মাঝে মধ্যে। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। গাইড হিসেবে পুরো পহেলগাঁও ঘোরাই। বইসরন ভ্যালিও নিয়ে যাই। ঠিক যেখানে গতকাল হত্যালীলা চলেছে! বহুবার সেখানে ট্রেক করেছি। তাই টিভি ৯ বাংলা ডিজিটাল থেকে যখন যোগাযোগ করা হল, প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না যে কী লিখব…কিন্তু লিখতে তো আমাকে হবেই, জানাতে হবেই আমার কেমন অনুভূতি, আমাদের কেমন অনুভূতি, আপামোর উপত্যকাবাসী কী ভাবছেন।
গতকাল যখন খবরটা পেলাম, তখন রিসোর্টেই ছিলাম। পা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল! কাশ্মীরের বুকে টুরিস্টদের হত্যা! আমার ৩৫ বছর বয়স। এমনটা আগে কখনই শুনিনি। এর থেকে ঘৃণ্য ঘটনা আর হতে পারে না। এই টুরিস্টের জন্যই তো পুরো কাশ্মীর বেঁচে আছে। টুরিজমই তো আমাদের অর্থ জোগায়। টুরিস্টের হত্যা মানে তো কাশ্মীরের পেটে লাথি!
প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। সঙ্গে কান্না পাচ্ছে। যাঁরা নিজেদের পরিবারকে হারিয়েছেন, তাঁদের সামনে আমাদের মাথা হেট হয়ে গেল। আমরাই তো সবাইকে বলতাম, নিশ্চিন্তে কাশ্মীরে আসুন। আমরা আছি। আপনাদের ভাই আমরা। এবার কীভাবে একথা বলব! যারা এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা একজনও জান্নাতে যাবে না, জাহান্নামই তাদের একমাত্র গন্তব্য। তারা যে দেশেরই হোক না কেন, যে ধর্মেরই হোক না কেন, ভূস্বর্গের গায়ে রক্ত লাগিয়েছে তারা। এটা অন্যায়, যা ক্ষমা করা যায় না।
বহু বছর বাদে এই উপত্যকায় টুরিস্টের হাসির পবিত্র শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমাদের রোজগারও ভাল হচ্ছিল। এখানে যাঁরা ঘুরতে আসতেন, তাঁরা রীতিমতো পরিবার হয়ে উঠেছিলেন। জঙ্গিরা আমাদের পরিবারের গায়ে আঘাত দিয়েছে। এটা সহ্য করা হবে না। আমি জোর গলায় বলতে চাই, এর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম খুঁজবেন না। জঙ্গিদের কোনও হিন্দু-মুসলিম হয় না। ওরা জঙ্গিই। ওদের মনুষত্ব নেই। এই ঘটনার পিছনে যে আক্রোশই থাকুক না কেন ওদের, তা অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি আগে হিন্দুস্থানি, তারপর কাশ্মীরি। আর ওরা শুধুই জঙ্গি। এটাই ওদের একমাত্র পরিচয়। যে পর্যটকের জন্য়ই গোটা কাশ্মীরের উনুন জ্বলে, যে পর্যটকরা আমাদের রুজি-রুটি, তাঁদের উপর এমন আক্রমণ! তাঁদেরকে হত্যা! জানলার বাইরে দেখছি, ঘোড়াগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। গোটা উপত্যকায় শ্মশানের স্তব্ধতা। হিমেল হাওয়া বইছে বটে তবে তাতে কেবল বারুদের গন্ধ! দম বন্ধ হয়ে আসছে। গলার কাছে একটা দলা পাকানো কষ্ট, লজ্জা, ঘেন্না টের পাচ্ছি প্রতি মুহূর্তে।
লেখক খুরসিদ আহমদ ওয়ানিন, পহেলগাঁওয়ের আরু ভ্যালির বাসিন্দা। নিউ আইসবার্গ নামের একটি রিসোর্ট চালান।
অনুলিখনে আকাশ মিশ্র
This content contains news and analysis related to a recent terror attack in Kashmir. The content may include sensitive visuals and discussions that could be distressing to some readers. Readers discretion is advised. We strongly condemn all forms of violence and terrorism. The purpose of this content is solely to inform and create awareness based on verified reports.
