Narendra Modi: ১৯৮৪ সালের জন্মাষ্টমী: হিংসা থামাতে কীভাবে একটা নগরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন যুবক মোদী…
Narendra Modi: ১৯৮৪ সালে গুজরাটের প্রান্তিজ নগরে সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়েছিল। ছোট এই নগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পরিবার নিয়ে ওই নগর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। সেইসময় আরএসএস-র প্রচারক ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। হিংসার বাতাবরণ দূর করতে তাঁর উদ্যোগের কথা আজও সেখানে মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
নয়াদিল্লি: গত দশ বছর তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাগ্মিতায় মুগ্ধ সাধারণ মানুষ থেকে বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতারা। জটিল চ্যালেঞ্জ, কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা দক্ষতার সঙ্গে কত সহজে তিনি করে ফেলেন, তা নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। তবে শুধু এখন নন, যুবক বয়স থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন দক্ষতা দেখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ১৯৮৪ সালে জন্মাষ্টমীর একটি ঘটনাই তাঁর প্রমাণ।
১৯৮৪ সালে জন্মাষ্টমীর সময় গুজরাটের সবরকান্তা জেলার প্রান্তিজ নগরে সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়েছিল। ছোট এই নগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পরিবার নিয়ে ওই নগর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। সেইসময় আরএসএস-র প্রচারক ছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রান্তিজ নগরের হিংসার এই বাতাবরণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সেখানকার আরএসএস কর্মীরা। নিজেদের সুরক্ষা ও এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রায় ১০০ কিমি পথ পেরিয়ে আহমেদাবাদে মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। বছর চৌত্রিশের মোদী তাঁদের সব কথা শোনেন। তাঁদের আশ্বাস দেন। এবং প্রান্তিজ ফিরে যেতে বলেন।
এর কয়েকদিন পরই মোদী প্রান্তিজ নগরে পৌঁছে যান। দুটি বড় এলাকা- বড়ি ভাগল এবং নানী ভাগলে সভা ডাকেন। সেই দুটি সভায় উপচে পড়ে ভিড়। শুধু আরএসএস কর্মী নয়, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, আধ্যাত্মিক সংগঠন, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা সেই সভায় আসেন। এমনকি, এলাকার বিশিষ্টজনরাও মোদীর সভায় অংশ নেন। সেইসময় প্রান্তিজ নগরে আরএসএস কর্মী খুব অল্প সংখ্যক ছিল। সেখানে মোদীর লক্ষ্য ছিল, সমাজের বৃহত্তর অংশের মানুষকে একজোট করা।
দুটি সভায় মোদী মানুষকে বোঝান, হিংসার দ্বারা এর সমাধান হবে না। তিনি বলেন, মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে হিংসা আঘাত করতে পারে না। হিংসা নির্ভর করে বিচ্ছিন্নতার উপর। তাই, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সেইসময় আসন্ন জন্মাষ্টমীকে আঁকড়ে ধরেই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেন।
মোদীর আহ্বানে সাড়া দেন সেখানকার মানুষ। একটি স্থানীয় মন্দিরের সামনে মোদীর বক্তব্য আজও স্মরণ করে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন প্রবীণরা। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে একটি বড় শোভাযাত্রার আহ্বান জানিয়েছিলেন মোদী। যেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ মিলিত হতে পারবেন। কৃষ্ণকে রথে বসিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। রথ সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। প্রস্তুতির উপর নজর রেখেছিলেন স্বয়ং মোদী। অনেকে ট্রাক্টর, গোরুর গাড়িকে রথের মতো সাজিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। রথকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেন। রাস্তায় রাস্তায় শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে ফুল দিয়ে গেট সাজানো হয়। জল ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কোনও কিছুতে যাতে ফাঁক না থাকে, সেদিকে নজর রেখেছিলেন মোদী।
শোভাযাত্রাকে জন আন্দোলনের রূপ দিতে একাধিক বৈঠক করেছিলেন মোদী। শোভাযাত্রার দিন প্রান্তিজ নগরকে চেনাই যাচ্ছিল না। পুরো নগর সেজে উঠেছিল। হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। গান, নাচে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বাতাস। একতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে নগরে।
এই শোভাযাত্রার প্রভাব পড়ে নগরে। একতার কাছে হার মানে হিংসা। কোনও হানাহানি ছাড়াই হিংসার বাতাবরণ মিলিয়ে যায়। মোদীর এই উদ্যোগের পর ওই এলাকায় আরএসএস-র সংগঠনও বিস্তার লাভ করে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)