চেন্নাই: বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল। মদ্যপ বাবার কাজেকর্মে মন নেই। সারাক্ষণ মদেই ডুবে থাকতেন। এই নিয়ে অভিযোগ জানাতেন মা। আর শুরু হত উচ্চগ্রামে ঝগড়া। পাড়া-প্রতিবেশিরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেই ঝামেলা উপভোগ করত। আর এই কারণে তাদের সামনে লজ্জায় ডুবে যেত ১৯ বছরের যুবক। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। তাই, বাবা-মায়ের সামনেই নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়েছেন তিনি। বাবা-মায়ের সামনেই ঢলে পড়েছেন মৃত্যু কোলে। ঝগড়া যে সন্তানদের উপর কতটা প্রভাব ফেলে, তার চূড়ান্ত পরিচয় পাওয়া গেল তামিলনাড়ুর কুন্দ্রথুরের এই মর্মান্তিক ঘটনায়।
হতভাগ্য যুবকের নাম বালাকৃষ্ণণ। বাড়ি ছিল কুন্দ্রথুরের মণিকন্দন নগরে। এক বেসরকারি কলেজের বি কম কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা, প্রভাকরণ দিনমজুরের কাজ করেন। তবে, মদের নেশায় আসক্ত প্রভাকরণ, বলতে গেলে কোনওদিনই কাজে যেতেন না। সারাদিনই মদ্যপান করে পড়ে থাকতেন। পয়সার জন্য স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করতেন। তাঁর অত্যধীক মদ্যপান এবং কর্মহীনতা নিয়ে, প্রায়ই স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হত। তাও একেবারে প্রকাশ্যে, প্রতিবেশিদের সামনেই। এই কারণে পাড়ার বের হতেও লজ্জা পেতেন বালাকৃষ্ণাণ। ক্রমশ অবসাদ তাঁকে গ্রাস করছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালেও তাঁদের বাড়িতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। কাজে যাননি প্রভাকরণ। এই নিয়ে তাঁদের বাড়ির সামনেই স্ত্রীর সঙ্গে তীব্র ঝগড়া শুরু করেছিলেন তিনি। প্রতিবেশিরাও ‘মজা নিতে’ জড়ো হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই অবস্থায় বালাকৃষ্ণণ বারবার তাঁর বাবা-মায়ের ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেছিল। তাদের বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু না তাঁর বাবা, না তাঁর মা – কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করেননি। উপরন্ত, ঝগড়ার মধ্যে প্রভাকরণ রান্নাঘরে গিয়ে একটি ছুরি নিয়ে এসেছিলেন। ছুরি হাতে নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেন স্ত্রীকে।
রাস্তায় নেমে বাবা-মায়ের এই লড়াই আর সহ্য হয়নি বালাকৃষ্ণাণের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাঁর বাবার হাত থেকে ছুরিটি কেড়ে নিয়েছিলেনন তিনি। বাবা-মাকে তিনি বলেছিলেন, “এই অপমান আমি আর সহ্য করতে পারছি না।” তারপর, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজের বুকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন। বিমূঢ় বাবা-মায়ের সামনেই ধীরে ধীরে নতিয়ে পড়েন তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুন্দ্রথুর থানার পুলিশ। তারা জানিয়েছে, রক্তের সমুদ্রে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিলেন বালাকৃষ্ণাণ। তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে দ্রুত ক্রোমপেট সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই বিষয়ে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ঘটনার আরও তদন্ত করা হচ্ছে।